Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল যদি নেয়ও, কে পড়া শেখাবে ওদের

শিক্ষক থেকে অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, সরকার অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক করলেও তাদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও তৈরি করা হয়নি।  ফলে কয়েক জন কোনও মতে স্কুলে যেতে পারলেও তাদের ‘শিক্ষা’ তেমন কিছু হচ্ছে না। 

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৪৯
Share: Save:

অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার আঙিনায় টেনে আনার জন্য সরকারি স্তরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যদিও বা তাদের স্কুলে ভর্তি করানো যায়, তাদের প্রশিক্ষণ যাঁরা দেবেন সেই ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’-দের অনেকেরই অটিজম সম্পর্কে স্পষ্ট ও সার্বিক ধারণা নেই। চাহিদার তুলনায় তাঁদের সংখ্যাও নগণ্য। অটিজম সম্পর্কে ধারণা নেই স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকেরও। ফলে কোনও কোনও সময়ে অটিস্টিক শিশুরা নিয়মিত স্কুল বা ‘রিসোর্স সেন্টার’-এ গেলেও কতটুকু লাভ হচ্ছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

শিক্ষক থেকে অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, সরকার অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা বাধ্যতামূলক করলেও তাদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও তৈরি করা হয়নি। ফলে কয়েক জন কোনও মতে স্কুলে যেতে পারলেও তাদের ‘শিক্ষা’ তেমন কিছু হচ্ছে না।

নদিয়া জেলায় বর্তমানে স্পেশ্যাল এডুকেটরের সংখ্যা মাত্র ৫৭। শুরু হয়েছিল ৬৭ জনকে দিয়ে। দিন দিন সংখ্যাটা কমছে। শূন্যপদে নিয়োগ হচ্ছে না। এক-এক জন স্পেশ্যাল এডুকেটরকে একটা করে চক্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই চক্রের প্রতিটি স্কুলের সমস্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব ওই এক জনের উপরেই। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা সেই কাজটা ঠিক মতো করে উঠতে পারছেন না।

চাপড়া দক্ষিণ সার্কেলে স্কুলের সংখ্যা ১১০। বরাদ্দ এক জন মাত্র স্পেশ্যাল এডুকেটর। তাঁকে আবার ‘হোম ভিজিট’-এর পাশাপাশি সপ্তাহে দু’দিন করে রিসোর্স সেন্টার চালাতে হয়। এর মধ্যে এক দিন করে আসতে হয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের (এসআই) অফিসে। এর বাইরেও আছে নানা দায়িত্ব। সব কাজ সামলে এতগুলি স্কুলে সপ্তাহে দু’দিন দূরের কথা, মাসে এক দিনও যাওয়া সম্ভব হয় না। অন্তত এমনটাই দাবি করছেন স্পেশ্যাল এডুকেটরেরা। তার উপরে তাঁদের অটিজম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ তো রয়েইছে।

চাপড়া দক্ষিণ সার্কেলের স্পেশ্যাল এডুকেটর মহিম গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “আমার এলাকায় ১৭৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া আছে। তার মধ্যে অন্তত এক জন অটিস্টিক। আমার তাকে যতটা সময় ও মনযোগ দেওয়া উচিত, তা দেওয়া সম্ভব হয় না।”

আবার সদর-৩ সার্কেলে আছে ৮৭টি স্কুল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ার সংখ্যা সাড়ে তিনশো। এর মধ্যে অন্তত চার জন অটিস্টিক। ওই সার্কেলের এক মাত্র স্পেশ্যাল এডুকেটর উত্তরা রায় বলেন, “এক জনের পক্ষে কোনও ভাবেই সবটা ঠিকঠাক করা সম্ভব নয়। স্পেশ্যাল এডুকেটরের সংখ্যা আরও না বাড়ালে এই সমস্যা থকেই যাবে।”

নদিয়ার স্পেশ্যাল এডুকেটরদের অনেকেই মনে করছেন, পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারলে গোটা বিষয়টা থেকে যাবে নাম-কা-ওয়াস্তে। তাতে স্কুলে যথার্থ প্রশিক্ষণ তো হবেই না, রিসোর্স সেন্টারও বিশেষ কাজে আসবে না। প্রতিটি চক্রে একটি করে ‘রিসোর্স সেন্টার’ আছে। দূর-দূরান্তের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সপ্তাহে দু’দিন করে সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের সকলের যে অটিজম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই, সেটাও এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বছর তিনকে আগে জেলায় এক বার এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ওই পর্যন্তই। সেই প্রশিক্ষণ অটিস্টিক পড়ুয়াদের বিশেষ ভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় বলেই তাঁদের দাবি।

তবে পরিকাঠামো তৈরি করার সঙ্গে স্কুলের সাধারণ শিক্ষকদের বড় অংশের মানসিকতার পরিবর্তন করাও জরুরি বলে মনে করছেন স্পেশ্যাল এডুকেটরদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্পেশ্যাল এডুকেটরের আক্ষেপ, “বেশির ভাগ শিক্ষকের অটিজম সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। ফলে তাঁরা ওই শিশুদের গুরুত্বও দেন না। তাঁরা শুধু তাদের জন্য সরকারি আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করে দায়মুক্ত হতে চান। যত দিন না শিক্ষকেরা নিজেরা এগিয়ে আসছেন, তত দিন এই সমস্যাগুলো থেকেই যাবে।”

সমগ্র শিক্ষা অভিযানের জেলার প্রকল্প আধিকারিক আজমল হোসেন অবশ্য আশ্বাস দেন, “অটিস্টিকদের নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করছি। আগামী দিনে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

না আঁচালে কে-ই বা বিশ্বাস করে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Autism Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE