‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলাকে দেবদারু গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে পড়শি এক মুদি ব্যবসায়ী অসিত বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমবাজার এলাকায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গুরুতর জখম ওই প্রৌঢ়াকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
ওই প্রৌঢ়ার পরিবারের অভিযোগ, এলাকার বহু মানুষ চোখের সামনে গোটা ঘটনাটা দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করেননি। ওই মহিলাকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি কেউ। ওই প্রৌঢ়ার পরিবারের তরফে রবিরার রাতেই বহরমপুর থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। পড়শি ওই মুদি ব্যবসায়ীর ছেলে আশিস বিশ্বাসের অভিযোগ, ওই প্রৌঢ়া তাঁর স্ত্রীর ঘরের জানালার নীচে মাটিতে ‘পানের সঙ্গে কয়েকটি ভাত’ মুড়ে রেখে যান। তারপরেই আশিসবাবুর মনে হয়, তাঁর স্ত্রীর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই ওই প্রৌঢ়া ‘তুকতাক’ করেছেন। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ওই ঘটনা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বচসাও হয়।
জখম ওই প্রৌঢ়ার স্বামী বলেন, ‘‘কোনও রকম সন্দেহ হলে আমার স্ত্রীকে ওই রাতে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদনও করি। কিন্তু ওরা কোনও কিছু না বলে চলে যায়। ওরা চলে যাওয়ায় বিষয়টি মিটে গিয়েছে বলে মনে করি।’’ অভিযোগ, রবিবার সকালে দলবল বেঁধে ওই প্রৌঢ়ার বাড়িতে ফের চড়াও হয় তারা। তাঁকে দড়ি দিয়ে দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে চলে মারধর।
ওই মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘১৯৯৬ সাল থেকে আমার স্ত্রী মানসিক রোগগ্রস্ত। কখনও-কখনও বাড়াবাড়ি হলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো হয়। বাড়িতেও বিড়বিড় করে কথা বলে আর হাত দিয়ে বিভিন্ন ইশারা করে। নিজের সঙ্গেই সব সময় থাকতে পছন্দ করে। এ নিয়ে বাড়িতেও কম অশান্তি হয় না। বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি।’’
আশিস বলেন, ‘‘প্রৌঢ়া কেন এমনটা করল? এটা তাঁকে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও সদুত্তর দেননি। এমনকী তাঁকে ওই পান দেখানো হলে তিনি ওই পান হাত থেকে কেড়ে চিবিয়ে খেয়েও নেন।’’ আশিসের এক বৌদি জানান, ‘‘তিন বছর আগে শাশুড়ি মারা যান। ডাক্তার দেখিয়েও রোগ ধরা পড়েনি। সকলের মনেই মৃত্যু ভয় আছে। ওই মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি তুকতাক করলেন। তিনি তার উত্তর না দিয়ে রহস্য তৈরি করলেন কেন?’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ওই ব্যবসায়ী পরিবারের লোকজন শিক্ষিত। তাঁরা অসুখ-বিসুখ হলে হাসপাতালেই যান। অথচ কুসংস্কারের বশে এমনটা করলেন কেন বুঝতে পারছি না।’’
মুর্শিদাবাদের সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক শ্যামলকান্দি মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই এলাকার বাসিন্দাদের কুসংস্কার দূর করতে আমরা শীঘ্র ওখানে সচেতনতা শিবির করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy