Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেকে তুলে ট্রেনের তলায় মা

হাঁফাতে-হাঁফাতে লাইনের উপর দিয়ে দৌড়ে কোলের ছেলেটাকে সবে প্ল্যাটফর্মের উপর বসিয়েছেন। তার পর নিজে উঠতে যাবেন, তখনই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন ছেড়ে দিল। ওঠার সময় পেলেন না। ট্রেনের তলায় চলে গেলেন বছর চল্লিশের মহিলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

হাঁফাতে-হাঁফাতে লাইনের উপর দিয়ে দৌড়ে কোলের ছেলেটাকে সবে প্ল্যাটফর্মের উপর বসিয়েছেন। তার পর নিজে উঠতে যাবেন, তখনই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন ছেড়ে দিল। ওঠার সময় পেলেন না। ট্রেনের তলায় চলে গেলেন বছর চল্লিশের মহিলা।

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ব্যস্ত কৃষ্ণনগর স্টেশনে চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অনেক যাত্রী। অনেকে আবার অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। বার-বার রেলের তরফে ওভারব্রিজের বদলে এই ভাবে তাড়াহুড়ো করে লাইন পার হতে বারণ করা হয়। প্রচারাভিযান চালানো হয়। কিন্তু তার পরেও কিছু যাত্রী অযথা তা অমান্য করে নিজেদের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন বলে অনেককে এ দিন আফসোস করতেও শোনা যায়।

পুলিশি সূত্রে জানানো গিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কৃষ্ণনগরে রেললাইন পার হতে গিয়ে মৃত মহিলার নাম জাহিদা বেওয়া। তাঁর বাড়ি নাকাশিপাড়া থানার গোপালপুর এলাকায়। সোমবার বছর সাতেকের ছোট ছেলেকে নিয়ে তিনি কল্যাণীতে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। মুড়াগাছা স্টেশন থেকে উঠেছিলেন শিয়ালদহ-গামী লালগোলা প্যাসেঞ্জারে। ট্রেন যখন কৃষ্ণনগর স্টেশনে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায় তখন দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছিল শিয়ালদহগামী একটি লোকাল। সেই ট্রেনে আগে কল্যাণী পৌঁছনো যাবে মনে করে জাহিদা ছেলে কোলে নিয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জার থেকে নেমে রেল লাইন পার হয়ে ওই ট্রেনে উঠবেন বলে দৌড়তে থাকেন।

দু’ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লোকাল ট্রেনটির সামনে চলে এসে জাহিদা ছেলেকে প্ল্যাটফর্মের উপর বসিয়ে দেন। কিন্তু তিনি যে লাইনে দাঁড়িয়ে তা চালক দেখতে পাননি। তিনি ট্রেন চালিয়ে দেন। বিপদ বুঝে আশপাশের অনেকেই চিৎকার করে ওঠেন। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনের চাকায় মহিলার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। চোখের সামনে মা-কে মারা যেতে দেখে ছোট্ট ছেলে আতঙ্কে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্ল্যাটফর্মের কিছু দোকানি তাকে আগলে রাখেন। পরে মহিলার মৃতদেহ ও শিশুটিকেও নিয়ে আসা হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।

পারিবারিক সূত্রের খবর, জাহিদার স্বামী মারা যান বছর ছ’য়েক আগে। তাঁদের চার ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলে থাকে আবাসিক মাদ্রাসায়। বড় ছেলে বাদশা শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করে। শক্তিনগর পুলিশ মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বাদশা বলেন, “মা ভাইটাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ভিক্ষে করতে যেতেন। কিন্তু এই ভাবে মারা যাবেন ভাবতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Train Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE