প্রতীকী ছবি।
শহরের বেশ কিছু এলাকায় মশার উৎপাত নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হচ্ছিলেন নবদ্বীপের বাসিন্দারা। গা ঘেঁষা বর্ধমানের মাধাইপুরের এক বৃদ্ধার ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবরে তাঁরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
মৃতার নাম অরুণা ভৌমিক (৬৫)। গত ১৯ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর রাতে জ্বর নিয়ে তিনি নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। দু’দিন পরে, ২২ অক্টোবর সকালে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৬ অক্টোবর দুপুরে সেখানেই তিনি মারা যান। হাসপাতাল তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিখেছে— “হেমারেজিক শক্ ইন এ কেস অফ ডেঙ্গি।”
নবদ্বীপের বাবলারি পঞ্চায়ত যেখানে শেষ হয়ে পূর্ব বর্ধমানের মাধাইপুর গ্রামের শুরু, সেই সীমানা বরাবর মাধাইপুর রোডের ধারেই বাড়ি অরুণা দেবীর। রাস্তার এক পাশে নদিয়া, অন্য পারে বর্ধমান। ওই এলাকার মানুষ বাসিন্দারা প্রায় সব ব্যাপারেই নবদ্বীপ-নির্ভর।
মৃতার বড় ছেলে নিশীথ ভৌমিক জানান, বৃদ্ধা গত ১২ অগস্ট থেকে তাঁর ভাইয়ের কাছে ওই কোচবিহারের পুন্ডিবাড়িতে ছিলেন। পুজোর মুখে, গত ১৩ অক্টোবর যখন ফেরেন, তখন সুস্থই ছিলেন। দশমীর দুপুর থেকেই তাঁর জ্বর-জ্বর ভাব।
প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। রাতে জ্বর বেড়ে যায়, সঙ্গে বমি। তখনই আর দেরি না করে তাঁকে নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানে ডেঙ্গির কথা জানা যায়নি। কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পরে।
নবদ্বীপ বা আশপাশের অঞ্চলে এর আগে ডেঙ্গিতে কারও মৃত্যুর কথা শোনা যায়নি। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালি বলেন, “এই শহরে এ বছর এখনও পর্যন্ত মোট তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এঁদের মধ্যে এক জন হরিয়ানার, এক জন কলকাতা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফেরেন, অন্য জন কর্মসূত্রে নিয়মিত বর্ধমানে যেতেন।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চলতি বছরে নদিয়া জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চাকদহে, কম নবদ্বীপে। চাকদহ ব্লকে ১২১ জন এবং পুর এলাকায় ৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কৃষ্ণনগর ১ ব্লকে ১০৬ জন এবং পুর এলাকায় ১৯ জন, রানাঘাট ১ ব্লকে ৭০ জন, ২ ব্লকে ২৬ জন এবং পুর এলাকায় চার জন আক্রান্ত হয়েছেন। কল্যাণী পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ ছুঁয়েছে। নবদ্বীপ পুর এলাকায় সেই সংখ্যাটা মাত্র তিন। গোটা নবদ্বীপ ব্লকে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন।
এই তথ্য সামনে রেখেই নবদ্বীপের উপ-পুরপ্রধান শচীন্দ্র বসাকের দাবি, “ভয়ের বিশেষ কারণ নেই। পুর এলাকায় যে ক’জন ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ মিলেছে, তাঁরা সকলেই বাইরে থেকে অসুস্থতা নিয়ে এসেছেন।” তিনি জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ তাঁরা দুই সদস্যের ১০৪টি ডেঙ্গি স্বেচ্ছাসেবক দল গড়েছেন, যারা পনেরো দিন অন্তর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জ্বরের তথ্য ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। ২৪টি ওয়ার্ডের জন্য গড়া হয়েছে চব্বিশটি ‘ভেক্টর কন্ট্রোল টিম’। প্রতিটি দলে সুপারভাইজার-সহ ছ’জন করে সদস্য আছেন। তাঁদের কাজ অতিরিক্ত জঞ্জাল, ঝোপঝাড় সাফ করে, মশার লার্ভা মারার জন্য স্প্রে এবং ফগিং করা।
ডেঙ্গি যদি ছড়ায়, তার দায় কিন্তু সেই পুরসভাকেই নিতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy