Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙন দেখার ঝোঁকে তলিয়ে গেলেন যুবক

সোমবার রাত পর্যন্ত মনোজ মাহাতো (৪০) নামে ওই যুবকের কোনও খোঁজ মেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় ভাঙন নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

দুয়ার দিয়েই বইছে গঙ্গা। সোমবার চর জাজিরায়। নিজস্ব চিত্র

দুয়ার দিয়েই বইছে গঙ্গা। সোমবার চর জাজিরায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০১:১৯
Share: Save:

ঘরবাড়ি, জমি-জিরেত তলাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। এবার ভাঙনের বলি হলেন এক যুবক। রবিবার ভর সন্ধ্যায় গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন এক যুবক। কল্যাণীর চরজাজিরার ঘটনা।

সোমবার রাত পর্যন্ত মনোজ মাহাতো (৪০) নামে ওই যুবকের কোনও খোঁজ মেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় ভাঙন নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। ইতিমধ্যে এই এলাকায় ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ভাঙনের মুখে দাঁড়ানো বাড়ির সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিতে গঙ্গার জল বিপদ সীমা ছাড়িয়েছিল। বৃষ্টি থামার পরে ভাগীরথীর জল কমতেই ভাঙন শুরু হয়। চাকদহের চাঁদুড়িয়ায় প্রবল ভাঙনে বেশ কয়েকটি বাড়ি তলিয়ে যায়। যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তাও যায় নদীগর্ভে। প্রায় ৫০টি বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। সেই পরিবারগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যা‌ওয়া হয়। গত কয়েকদিনে এখানকার ভাঙনের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও ভাঙন শুরু হয় কল্যাণীর চর এলাকায়। চরযাত্রাসিদ্ধি, ও চরজাজিরা এলাকায় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে।

এই এলাকার এখ বাসিন্দা সজল মাহাতো বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের এ পারে গঙ্গার পাড় দেদার ভাঙছে। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি। এ বার ইতিমধ্যে ২০টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। আরও কত বাড়ি যে তলাবে জানি না।’’ এলাকার বাসিন্দারা এখন প্রতিনিয়ত আতঙ্কের প্রহর গুণছেন। নদীর জল কমার পরে শুরু হয়েছিল ভাঙন। চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পঙ্কজ সিংহ বলেন, ‘‘নদীর পার আলগা হয়ে রয়েছে। ফলে নদীতে জোয়ার এলেই পাড় ভেঙে নদী জনপদ গিলতে শুরু করেছে। সেই ভাঙনেই তলিয়ে গেল ওই যুবক।’’

চরজাজিরার বাসিন্দা মনোজ মাহাতো পেশায় দিন মজুর। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় নদীতে জোয়ার শুরু হয়। একটু একটু করে পাড় ভাঙছিল। তা দেখতে বেশ ভিড়ও জমেছিল নদীর পাড়ে। আচমকাই পাড়ের একটা বড় অংশ ধসে নদীতে চলে যায়। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোজ। অনেকের চোখের সামনেই তিনি নদীতে তলিয়ে যান। নদীতে পড়ে যাওয়ার পরে আর কেউ তাঁকে দেখতি পাননি। এলাকার আর এক বাসিন্দা লছমন মাহাতো বলেন, ‘‘আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল ও। এ দিকে ও দিকে নদীর পাড় ভাঙছে, আর আমরা সে দিকে তাকিয়ে দেখছি। আচমকাই বিরাট শব্দ করে আমার সামনের পাড় ধসে নদীতে চলে গেল। নদীর পাড় আর একটু ধসলেই আমিও তলিয়ে যেতাম।’’

সোমবার দিনভর গঙ্গায় তল্লাশি চালিয়েও খোঁজ মেলেনি মনোজের। কল্যাণীর এসডিও স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ত্রিপলের সঙ্গে গৃহহীনদের রান্নার সরঞ্জাম, বাসনপত্র এবং খাবার দেওয়া হয়েছে। যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁদের সরকার ফের বাড়ি তৈরি করে দেবে। যাাঁদের জমি নেই, সরকারই তাঁদের জমি দিয়ে বাড়ি তৈরি করে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Drowned Ganga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE