Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গায় ঝাঁপ, বাঁচাল যুবক

রানির ঘাটে গঙ্গার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনা কয়েক যুবক। কয়েক পলক আগেই তাঁদের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল জিনস-টপ পড়া মেয়েটি। চমকানোর মতো কিছু ছিল না। নবদ্বীপের ঘাটে এমন কত লোকই তো আসে!

গঙ্গার ঘাটে সঞ্জয়।

গঙ্গার ঘাটে সঞ্জয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০১:৩৭
Share: Save:

মেয়েটির পায়ে নূপুর ছিল।

ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে সে যখন তরতরিয়ে বর্ষার ভরা গাঙের দিকে নেমে যাচ্ছে, রিনরিনিয়ে সেই নূপুর বাজছিল। শনিবার। রাত প্রায় ৯টা।

রানির ঘাটে গঙ্গার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনা কয়েক যুবক। কয়েক পলক আগেই তাঁদের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল জিনস-টপ পড়া মেয়েটি। চমকানোর মতো কিছু ছিল না। নবদ্বীপের ঘাটে এমন কত লোকই তো আসে!

সেই মেয়ে যে শান্ত ভাবে ঘাটে জুতো খুলে রেখে জলে নেমে ভেসে যাবে, কে ভেবেছিল! ‘ডুবে গেল, ডুবে গেল’ চিৎকার শুনে সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় আর তাঁর বন্ধুরা যখন ছুটে গিয়েছেন, তত ক্ষণে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। আলো-আঁধারে ডুবছে-ভাসছে তার চুল। “গিয়ে দেখি, নীচের সিঁড়িতে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে উঠে চিৎকার করছেন!” সঞ্জয় আর দেরি করেননি। নিজের মোবাইলটা ঘাটের সিঁড়িতে রেখে সোজা জলে ঝাঁপ দেন।

ততক্ষণে স্রোতের টানে ঘাট থেকে অন্তত পঁচিশ-তিরিশ হাত দূরে ভেসে গিয়েছে মেয়েটি। তবে হরবখত গঙ্গা সাঁতরে স্নান করা সঞ্জয়ের বুক কাঁপেনি। বরং নিখুঁত দক্ষতায় চুলের গোছা ধরেই তিনি মেয়েটিকে পাড়ের সিঁড়ির দিকে টেনে আনেন। কাছে আসতেই সকলে ধরাধরি করে তাকে জল থেকে তুলে ফেলে।

জল থেকে তোলার পর প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেন সুজিত দে এবং তাঁর পরিবারের মহিলারা। মেয়েটিকে উল্টে শুইয়ে পিঠে চাপ দিয়ে জল বের করা হয়। রানিরঘাটে গঙ্গার ধারে সুজিতের বাড়ি আর চায়ের দোকান। তাঁরা মেয়েটির পোশাক পালটে দেন। ইতিমধ্যে মেয়েটির এক আত্মীয় তাকে চিনতে পেরে বাড়িতে খবর দেন। মা-বাবা ঘাটে চলে আসেন।

পরে জানা যায়, ওই তরুণী নবদ্বীপ সাহানগরের এক ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে। এ বছর নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। সন্ধ্যায় মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে তার রাগ উঠে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সটান সে চলে আসে গঙ্গার ঘাটে। তার পর এই কাণ্ড! অনেক রাতে সুস্থ হওয়ার পর তাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান অভিভাবকেরা।

বছর আটাশের সঞ্জয় স্থানীয় রাধারানি মন্দিরের গাড়ি চালান। নানা জনের পিঠ চাপড়ানির মধ্যে তিনি শুধু বলছেন, “মেয়েটা ঝাঁপ দেওয়ার সময়ে আমরা ওখানে বসে না থাকলে কী হত!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ganga Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE