সেই বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র
দাদুর কাছে থাকতে এসেছিল ছেলেটা।
জানত না, দাদুর বাড়িতে বোমা রাখা আছে। পাইপের মতো দেখতে জিনিসটা হাতে পেয়ে সে মাটিতে ঠুকছিল। আচমকাই বিকট শব্দ করে সেটা ফেটে যায়। মাথার খুলি উড়ে যায় ছেলেটার।
সোমবার দুপুরে ভরতপুর থানার শ্যামপুরে ওই ঘটনার পরে পুলিশের অনুমান, বাড়িতে মজুত রাখা সকেট বোমা ফেটে সফিউদ্দিন শেখ (১২) নামে ওই বালকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি আদতে বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার উজলপুরে। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। বাবা মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়েছেন। বছরখানেক যাবৎ তাই সে মামার বাড়িতেই ছিল। বাড়িতে বোমা রাখার অভিযোগে তার দাদু, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী তথা বালি কারবারি নুর ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাতে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘ওই বাড়িতে কেন বোমা রাখা হয়েছিল, কেই বা রেখেছিল, জানতে তদন্ত হচ্ছে। বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে জেরা করা হচ্ছে। সিআইডি-কে ডাকা হয়েছে।’’ কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হলেও মৃতদেহ ছাড়া হয়নি। পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার, সিআইডি-র দল এসে দেহ দেখবেন। তার পরেই তা বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে ছোটদের জখম বা মৃত্যু হওয়ার ঘটনা মুর্শিদাবাদে নতুন কিছু নয়। মাস আড়াই আগে রঘুনাথগঞ্জের ইছাখালি গ্রামে নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে তিন জন বালক জখম হয়। তার ঠিক আগেই হরিহরপাড়ার কেদারতলা গ্রামে বাঁশবাগানে পড়ে থাকা বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে জখম হয় দুই স্কুল-পড়ুয়া। বছরখানেক আগে প্রায় একই ঘটনা ঘটে ডোমকলের বাজিতপুরে খেলার মাঠে। জখম হয় দুই কিশোর। রানিনগরে বোমাকে বল ভেবে জখম হয় এক বালক। বছর দেড়েক আগে জলঙ্গির ধনীরামপুরেও বাড়ির পিছনে মজুত রাখা বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে এক বালক জখম হয়েছিল।
তালিকা বাড়ানো নিরর্থক। প্রশ্ন হল, নুর ইসলামের বাড়িতে বোমা মজুত ছিল কেন?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নুর ইসলাম আদৌ বিশেষ সুবিধার লোক নন। এলাকায় তিনি বালি মাফিয়া বলেই পরিচিত। ময়ূরাক্ষী থেকে বালি তোলার কারবারে জড়িত। এবং এই কারবারের স্বার্থেই শাসকদলের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলতে হয় তাঁকে। আগে তিনি সিপিএম করতেন। রাজ্যে সরকার বদলের বছর খানেকের মধ্যে তৃণমূল হয়ে গিয়েছেন। যদিও তার পরেও এলাকার আদি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক নেই। বরং বিবাদ আরও বেড়েছে।
ঘটনার পরেই নুর ইসলামের সঙ্গে তাঁদের কোনও রকম সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন ভরতপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নুর আলম। তাঁর দাবি, ‘‘উনি আমাদের দলের কেউ নন। কংগ্রেসের লোক।’’ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আব্দুল বারি অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘ফেঁসে যেতেই নিজেদের লোককে আমাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’
মুর্শিদাবাদের এই এলাকায় ঝগড়া বিবাদে বোমাবাজি নতুন কিছু নয়। বালি খাদানের দখল নিয়ে গোলমাল তো ছিলই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পুকুরের অংশীদারি নিয়ে বিবাদও। গত বছরই নভেম্বরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজিতে রহিম শেখ (২৮) গ্রামের এক যুবক মারা যায়। তাঁর স্ত্রী রাবিয়া বিবি ২৪ জনের বিরুদ্ধে ভরতপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই অভিযোগে নাম না থাকলেও নুর ইসলাম এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন। পরে ফিরে আসেন।
স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, নুরের বাড়ি থেকে টিনের বাক্সে পুলিশ কিছু নিয়ে গিয়েছে। তাঁর কোনও রকম জঙ্গি-যোগ ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে হচ্ছে। তবে ওই বাড়ি থেকে ঠিক কী পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে পুলিশের কেউ মুখ খুলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy