Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মুকুলের মায়া কাটাতে কাঁচি শানাচ্ছেন গৌরী

ডানা ছাঁটার পরেও এক মাত্র নদিয়ায় দলীয় জেলা পর্যবেক্ষক পদে তাঁকে রেখে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। সেই জেলাতেই মুকুল রায়ের অনুগামীদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। কাঁচি সেই জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের হাতে, যিনি এক সময়ে মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে যাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে দল সূত্রের খবর। তার পর থেকেই তাঁর মুকুলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। পরে সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই তিনি সরাসরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৬
Share: Save:

ডানা ছাঁটার পরেও এক মাত্র নদিয়ায় দলীয় জেলা পর্যবেক্ষক পদে তাঁকে রেখে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। সেই জেলাতেই মুকুল রায়ের অনুগামীদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।

কাঁচি সেই জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের হাতে, যিনি এক সময়ে মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে যাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে দল সূত্রের খবর। তার পর থেকেই তাঁর মুকুলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। পরে সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই তিনি সরাসরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

জেলা তৃণমূলের একাংশের দাবি, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এ বার নিজের ‘সাম্রাজ্য’ নিষ্কণ্টক করতে নেমেছেন গৌরীবাবু। মুকুল-ঘনিষ্ঠদের সরিয়ে গোটা জেলায় নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন। দিন কয়েক ধরেই দলের নেতা-বিধায়কদের উপরে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। কে-কে এখনও মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল, তার মাপজোক চলছে। যাঁরা মুকুলের সিবিআই দফতরে হাজিরার দিন উপস্থিত ছিলেন বা নিজাম প্যালেসে নেতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁরা তো আগেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছেন। তার বাইরেও যে মুকুল-ঘনিষ্ঠেরা রয়েছেন, এ বার তাঁরা নজরে চলে এসেছেন।

সব মিলিয়ে নদিয়া জেলা তৃণমূলের অন্দরে আতঙ্কের পরিবেশ। পারস্পরিক সন্দেহ মাথাচাড়া তো দিয়েইছে, মুকুলের সঙ্গে যে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই তা অন্তত প্রকাশ্যে প্রমাণ করতে উঠে-পড়ে নেমেছেন নেতাদের একাংশ। গৌরীবাবুর বিরোধী শিবিরের এক বিধায়কের মতে, “বিপদটা আসলে অন্য জায়গায়। কারা মুকুল রায়ের অনুগামী বা ঘনিষ্ঠ, তা গৌরীবাবু ভাল করেই জানেন। কারণ তিনি নিজেই একদা ওই শিবিরে ছিলেন।” অন্য একটা বিপদেরও গন্ধ পাচ্ছেন গৌরী-বিরোধীরা। বিধায়কের দাবি, “যাঁরা এত দিন জেলা সভাপতির বিরোধিতা করে এসেছেন, তাঁদেরও মুকুল-ঘনিষ্ঠ তকমা দিয়ে সুকৌশলে ছেঁটে ফেলার চেষ্টা চলছে। এই সুযোগে ক্ষমতার রদবদল করে গৌরীবাবুরা বিরোধী গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছেন।’’

কী ধরনের রদবদল হতে পারে?

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, নদিয়া জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী ঝুমুর বসু দীর্ঘদিন ধরেই মুকুল-অনুগামী বলে পরিচিত। তিনি নিজাম প্যালেসে নেতার সঙ্গে দেখাও করতে গিয়ে ছিলেন বলেও খবর রয়েছে। তাঁকে ছেঁটে ফেলে গৌরী-ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূল জেলা সভানেত্রী তথা চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষকে ওই পদে বসানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদে বসানো হতে পারে কৃষ্ণগঞ্জ উপনির্বাচনে জিতে সদ্য বিধায়ক, দলে গৌরীবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত সত্যজিৎ বিশ্বাসকে। জেলায় মুকুলের খাসতালুক বলে পরিচিত কল্যাণী এবং হরিণঘাটা ব্লকেও ব্যাপক রদবদলের হিসেব কষা চলছে। কল্যাণীর ব্লক সভাপতি নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে অরুপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুকে এবং হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি দিলীপ রায়কে সরিয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চল দেবনাথকে সভাপতি করা হতে পারে। কৃষ্ণগঞ্জের জয় উপলক্ষে আগামী ১ মার্চ কল্যাণীর সভায় রাজ্য নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অরুপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে এই সব রদবদলের কথা জানিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে দলে জল্পনা চলছে।

জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, যে দুই মহকুমায় মুকুলের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল, সেই রানাঘাট এবং কল্যানী বিভিন্ন সাংগঠনিক স্তরেও বড়সড় বদল আসতে পারে। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “ওই দুই মহকুমায় সিংহভাগ জনপ্রতিনিধি ও সাংগঠনিক নেতা মুকুল-অনুগামী বলে পরিচিত। বরং জেলা সভাপতির তেমন প্রভাব ছিল না। এখন সুযোগ পেয়ে তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের তুলে আনতে চাইছেন।” গৌরীবাবুর ছেলে অয়ন দত্ত ইতিমধ্যেই টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি। এ বার তাঁর ‘পুত্রসম’ সত্যজিৎ যুব সভাপতি হলে ছাত্র, যুব ও দল এই তিন স্তরেই তাঁদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

বুধবার গৌরীবাবু অবশ্য দাবি করেন, “তৃণমূল পরিবারে গোষ্ঠী বলে কিছু নেই। মুকুল-ঘনিষ্ঠ বলেও কোনও কথা হয় না। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি সেটাই পালন করবেন।” সম্ভাব্য রদবদল প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “যাঁরা নানা অন্তর্ঘাত ও প্ররোচনা সত্ত্বেও ভাল কাজ করেছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দিতেই দলের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব দেওয়া হবে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা বিরোধী শিবিরের যে কথা তোলা হচ্ছে, তা কষ্টকল্পিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gauri sankar datta mukul roy tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE