Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশিক্ষার অর্থ খরচ

শাস্তি নয়, উত্‌সাহ দিয়ে মিলল সাফল্য

কোনও শাস্তি নয়। নয় বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারিও। জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাজ আদায় করিয়ে নেওয়ায় সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা খরচে সাফল্য মিলেছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। এমনটাই দাবি জেলা প্রশাসনের।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

কোনও শাস্তি নয়। নয় বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারিও। জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাজ আদায় করিয়ে নেওয়ায় সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা খরচে সাফল্য মিলেছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। এমনটাই দাবি জেলা প্রশাসনের।

কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা খরচ করতে পারেনি। বছরের পর বছর সেই টাকা পড়ে রয়েছে ব্যাঙ্কে। কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার টাকা খরচ করলেও জমা দেননি ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ বা ইউসি। বার বার এমনই স্কুলগুলিকে সতর্ক করেও কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। পড়শি জেলার উল্টো পথে হেঁটে সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন।

এই সাফল্যের কারণ কী? জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-২০১৪ সালের আর্থিক বছরের শেষে হিসেব-নিকেশ করতে গিয়ে দেখা যায় যে, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্কুল ২৮ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি। তখন টাকা খরচ করতে না পারা ওই সব স্কুলের তালিকা তৈরির পাশাপাশি গঠন করা হয় চারটি দল। প্রতিটি দলে রয়েছেন দুজন কো-অর্ডিনেটর-সহ তিন জন সদস্য। ওই চারটে দল পৃথক ভাবে জেলার বিভিন্ন স্কুল পর্যবেক্ষণে গিয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ খরচের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়। এমনকী বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে প্রতি দিনের কাজের খোঁজখবরও নিতেও শুরু করেন ওই দলের সদস্যরা। এতে উত্‌সাহিত হয়ে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ খরচ করতে পেরেছে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “দেখা গিয়েছে কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার টাকা খরচ করলেও জমা দেয়নি ইউসি বা ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’। তখন বিভিন্ন স্কুলে পর্যবেক্ষণে যাওয়ার সময়ে তিন জনের ওই দল ইউসি ফর্মও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই ফর্ম পূরণ করে নিয়ে আসে। এ ভাবে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষকে চাপ কিংবা শাস্তি না দিয়েই সর্বশিক্ষা মিশন সাফল্য পেয়েছে।”

বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, প্রাথমিক, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র মিলিয়ে রয়েছে ৬০১৫টি স্কুল। তার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৯০৮, প্রাথমিকের সংখ্যা ৩১৭৩, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ১৫৮৪, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ২০২ ও মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্র ৭২টি। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশেষ চারটি স্কুল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ সালের আর্থিক বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় কোনও ইউসি বকেয়া পড়ে নেই। সমস্ত স্কুলের ইউসি জমা পড়েছে। ২০১৩-১৪ সালের আর্থিক বছরে সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় মুর্শিদাবাদ জেলা ১২০ কোটি টাকা পেয়েছিল। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৮৪ টাকা পড়ে রয়েছে। ওই টাকা জেলার মোট ৫৬টি স্কুল এখন পর্যন্ত খরচ করতে পারেনি।

তার মধ্যে অতিরিক্ত ২টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা মিশন দফতর থেকে ৮ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে কান্দি চক্রের কান্দি জেমো এনএম হাই স্কুলকে। একই ভাবে ৪ লক্ষ ৯ হাজার টাকা পেয়েছে জিয়াগঞ্জ চক্রের ডাহাপাড়া বিকেএ শিক্ষানিকেতন। বছর খানেক আগে ওই অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজ শুরুই হয়নি। কারণ হিসেবে কান্দি জেমো এনএম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সূর্যেন্দু দে বলেন, “স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারিনি। আমাদের স্কুলে পরিচালন সমিতি নেই বলে হয়তো ওই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়নি। এই অবস্থায় গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে ওই অর্থ দ্রুত খরচ করার করার কথা জানিয়ে সর্বশিক্ষা মিশন দফতর স্কুলে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই মতো শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”

অন্য দিকে ডাহাপাড়া বিকেএ শিক্ষানিকেতনের শিক্ষক তথা প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবুল কুমার রায় বলেন, “আমাদের স্কুলে এত দিন কোনও স্থায়ী প্রধান শিক্ষক ছিল না। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধানশিক্ষক পদে ইমদাদুল হক স্কুলে যোগ দেন। সর্বশিক্ষা মিশনের ওই অর্থ অবিলম্বে খরচ করার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। সেই মতো শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজও সুরু হয়েছে।” তবে গত এক বছরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে তিন জন নিয়োগ হওয়ায় সকলেই সেই কাজের দায় এড়িয়ে যান বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জেলা প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিন বলেন, “ওই অর্থ খরচের জন্য আগামী ৩১ জানুয়ারি শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে অর্থ খরচ করে ইউসি জমা দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই বরাদ্দ অর্থ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।” ওই আধিকারিক জানান, শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে জেলার এমন স্কুলে ওই অর্থ বরাদ্দ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE