একটু নিরাপত্তার আশায় জন্মভূমি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল পরিবারটি। বোঝেননি, এ পারেও অত্যাচারের শিকার হতে হবে তাঁদের কিশোরী মেয়েকে। চার মদ্যপ যুবকের হাতে যৌন নির্যাতনের জেরে মেয়েকে সংজ্ঞাহীন হতে দেখলেন অসহায় বাবা-মা। এর প্রতিকার করতে ভরা বাজারে সালিশি সভা বসল। জরিমানাও করা হল চার অভিযুক্তকে। কিন্তু তার পরও অভিযুক্তদের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের একাংশের হুমকি চলছেই। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ছিন্নমূল পরিবারটি। এই পরিস্থিতিতে কিশোরীর মায়ের প্রশ্ন, “কোথায় গেলে নিরাপত্তা পাব বলতে পারেন?”
সালিশি সভায় উপস্থিত ছিলেন নানা দলের নেতারা। মামজোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল সদস্য শুভেন্দু সরকার উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন। বাজার কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সুভাষ হালদার, কংগ্রেস নেতা সুহাস বন্দ্যোপাধ্যায় সালিশিতে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ছিন্নমূল পরিবারটির বৈধ নাগরিকত্ব না থাকায় পুলিশের কাছে গেলে বিপদে পড়তে পারে বলেই তাঁরা সালিশি করে বিষয়টি মেটাতে চেয়েছিলেন। তবে জরিমানার সিদ্ধান্ত তাঁদের নয়, দাবি করছেন ওই নেতারা। মামজোয়ান গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের একেবারে শেষ সীমানায় বাড়ি ওই হিন্দু পরিবারের। কিশোরীর মা জানান, হোলির দিন দুপুরে হঠাত্ বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে গ্রামেরই চার মদ্যপ যুবক। প্রথমে তারা কিশোরীর মাকে জোর করে রং মাখায়। বিপদ বুঝতে পেরে কিশোরী ঘরের ভিতরে ঢুকতে গেলে ওই যুবকরা তাকে জোর করে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মেয়ের বিপদ বুঝতে পেরে বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয় কিশোরীর বাবা-মাকে। প্রায় মিনিট পনেরো এ ভাবেই চলে অত্যাচার, দাবি ওই কিশোরী ও তার পরিবারের।
তাদের চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁদের দেখে বেরিয়ে আসে অভিযুক্তরা। মদ্যপ চার যুবকের এক জন রামদা নিয়ে কিশোরীর পরিবারের লোকদের তাড়া করে। ভয়ে তাঁরা বাড়ির পিছনের মাঠ দিয়ে ছুটে পাশের পীরপুর গ্রামে হাজির হন। সেখানে যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যায় ওই কিশোরী। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামীণ চিকিত্সকের কাছে। তিনি তাকে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। বগুলার হাসপাতাল থেকে ফের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিত্সার পরে তাকে বৃহস্পতিবার রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও সে পুরোপুরি সুস্থ নয়।