Advertisement
E-Paper

পরপর সাইবার অপরাধের শিকার তরুণীরা

ফের সাইবার ক্রাইমের শিকার হলেন এক তরুণী। জঙ্গিপুরের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর ছবি মোবাইলে তুলে, ফটোশপের সাহায্যে তাতে অশ্লীল ছবি জুড়ে ইন্টারনেটে তা ছড়িয়ে দিল প্রতিবেশী দুই যুবক। ওই ছাত্রী ও তার বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বুধবার পিন্টু শেখ ও টনিক শেখকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার আগেই ওই ছবির জেরে বিয়ে ভেঙে গেল তরুণীর। মোবাইলে তাঁর ছবি দেখার পর তাঁর স্বামী তাঁকে তালাক দেন, জানিয়েছে ওই তরুণীর পরিবার।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৯
Share
Save

ফের সাইবার ক্রাইমের শিকার হলেন এক তরুণী। জঙ্গিপুরের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর ছবি মোবাইলে তুলে, ফটোশপের সাহায্যে তাতে অশ্লীল ছবি জুড়ে ইন্টারনেটে তা ছড়িয়ে দিল প্রতিবেশী দুই যুবক। ওই ছাত্রী ও তার বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বুধবার পিন্টু শেখ ও টনিক শেখকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার আগেই ওই ছবির জেরে বিয়ে ভেঙে গেল তরুণীর। মোবাইলে তাঁর ছবি দেখার পর তাঁর স্বামী তাঁকে তালাক দেন, জানিয়েছে ওই তরুণীর পরিবার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে মোবাইলে ওই ছাত্রীর ছবি তুলেছিল প্রতিবেশী পিন্টু। অভিযোগ, সেই ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি জুড়ে পিন্টু ও তার কলেজ পড়ুয়া বন্ধু টনিক ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হতে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়। অভিযুক্ত ওই দুই যুবকের বাবা-মা ক্ষমা চান। অভিযোগ, তারপরেও ওই দুই যুবক ছাত্রীর বাড়িতে ফোন করে হুমকি দেয়, দেড় লক্ষ টাকা না দিলে ওই অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। বুধবার দুপুরে ওই ছাত্রী ও তার বাবা রঘুনাথগঞ্জ থানায় গিয়ে ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগ জানানোর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই পুলিশ পিন্টু ও টনিককে গ্রেফতার করে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীর বছরখানেক আগে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছে। কিন্তু লেখাপড়ার কারণে সে বাপের বাড়িতেই থাকত। কথা ছিল, উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই ছাত্রীর স্বামী জঙ্গিপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সেখানে তাঁকেও ওই ছাত্রীর ছবি দেখিয়ে পিন্টু ও টনিক বিভ্রান্ত করে বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “ওই দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করল ঠিকই। কিন্তু আমার মেয়ের ক্ষতি করে দিল। ওদের জন্য জামাই মেয়েকে তালাক দিয়ে চলে গিয়েছে।”

এই ধরনের ঘটনা মুর্শিদাবাদে নতুন নয়। দু’দিন আগে, গত সোমবার একই রকম অভিযোগ দায়ের হয়েছে ফরাক্কা থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কা এলাকার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি একই ভাবে মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রামেরই এক যুবকের বিরুদ্ধে। তাকে বিষয়টি নিয়ে চেপে ধরতেই সে পাল্টা হুমকি দেয়, এক লক্ষ টাকা না দিলে সেই ছবি ইন্টারনেটেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আতঙ্কিত ওই ছাত্রী ও তার মা ফরাক্কা থানায় সোমবার দুপুরে ইসমাইল শেখ নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তিন দিনের মধ্যে কিছু করতে পারেনি ফরাক্কা থানার পুলিশ।

এই নিয়ে গত বছর চারেকের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় এই ধরণের অন্তত ৬টি ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে চারটি ঘটনাই জঙ্গিপুর মহকুমার। ২০১০ সালে সামশেরগঞ্জ এলাকায় একই ভাবে এক ছাত্রীর ছবির সঙ্গে অশ্লীল ছবি জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এলাকার বেশ কিছু কম্পিউটার আটক করে। গ্রেফতার করা হয় একজন কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে। ২০১৩ সালে ওই এলাকাতে অশ্লীল ছবির জেরে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে। ছবিটা যে তারই ছবি নয়, সে কথা বিশ্বাস না করে ওই কিশোরীর মা মেয়েকে বকাবকি করেন। তার জেরেই আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। সম্প্রতি জলঙ্গি ও ডোমকলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

ডোমকলের এক পদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, “সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে পুলিশের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। ফলে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে অভিযুক্তরা।” ফরাক্কার আই সি দাউদ মনসুর মহম্মদ হোসেন বলেন, “এটা এমন একটা সামাজিক অপরাধ যার শিকার হতে পারেন যে কোনও পরিবার। উদ্বেগটা সেখানেই। তিলডাঙায় অভিযুক্তকে ধরতে তাই চেষ্টার কসুর নেই পুলিশের।” জেলার আইনজীবী সুবীর রায় বলেন, “এই ধরনের সাইবার ক্রাইম বন্ধ করতে হলে জেলায় উন্নত সাইবার সেল থাকার দরকার। মুর্শিদাবাদে তা নেই। সাধারণ অপরাধের সঙ্গে একে এক গোত্রে ফেলা ঠিক হবে না, কারণ এটা সামাজিক বিপর্যয়। যে সব মেয়েরা এর শিকার হচ্ছে, মানসিক ভাবে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। গ্রামে বেরোতে পারছে না।”

পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সাইবার ক্রাইম নানা ভাবে ঘটছে জেলায়। এটিএমে জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ফোন করে কাউকে মোটা অঙ্কের টাকা সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি কোনও মহিলার ছবির সঙ্গে আপত্তিকর ছবি জুড়ে দিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনাও সাইবার অপরাধের মধ্যে পড়ে।” তিনি জানান, জেলায় গত দু’দিনে দুটি সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। তাঁর আশ্বাস, “এই সব ঘটনায় যাতে দোষীরা কঠোর সাজা পায় আমি নিজে তা দেখব। এই আইনের খুঁটিনাটি দিক জানার ক্ষেত্রে পুলিশের যদি কোনও ঘাটতি বা সমস্যা থাকে তা দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে প্রতিটি থানার ওসি ও আইসিদের সঙ্গে কথা বলব।”

cyber crime women raghunathganj biman hazra latest news online news

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}