Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অর্থলগ্নি সংস্থায় তালা দিলেন কাউন্সিলর

পুলিশের উপর আস্থা নেই। প্রতারিতদের পাশে দাঁড়িয়ে এ বার এক অর্থলগ্নি সংস্থার দফতরে হানা দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর টাউন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর দত্ত। সোমবার দুপুরে বালুরঘাট শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকার ঘটনা। মেয়াদ শেষেও জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এ দিন সরব হন ওই তৃণমূল নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

পুলিশের উপর আস্থা নেই। প্রতারিতদের পাশে দাঁড়িয়ে এ বার এক অর্থলগ্নি সংস্থার দফতরে হানা দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর টাউন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর দত্ত।

সোমবার দুপুরে বালুরঘাট শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকার ঘটনা। মেয়াদ শেষেও জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এ দিন সরব হন ওই তৃণমূল নেতা। আমানতকারীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ওই সংস্থার অফিসে চড়াও হন বলে অভিযোগ। কর্মীদের বাইরে বের করে দরজায় তালাও ঝুলিয়ে দেন। চাবিও নিজের কাছে রেখে দেন।

২০১৩ সালে সারদার ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার পর একের পর এক ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন পদক্ষেপ শুরু করে। সেই মতো বালুরঘাটে সারদার পাশাপাশি রোজ ভ্যালি, অ্যালকেমিস্ট, টাওয়ারের মতো অন্তত ৪০টি ওই ধরণের অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার বন্ধ হয়ে যায়। কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে পুলিশও তত্‌পর হয়ে পদক্ষেপ করলে এতদিন ধরে ওই সংস্থা কারবার করে আসছিল। শেষমেশ তৃণমূল নেতাকে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হল। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে শহরে প্রশ্ন উঠেছে। ওই তৃণমূল নেতার পদক্ষেপে পুলিশের উপর অনাস্থার বিষয়টিও সামনে এসেছে।

আমানতকারীদের একাংশের অভিযোগ, গোল্ড লোনকে সামনে রেখে ওই সংস্থা সঞ্চয় প্রকল্পের নামে বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে। অন্তত প্রায় ৩০ জন আমানতকারী মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে টাকা ফেরতের দাবিতে সরব হয়েছেন বলে শঙ্করবাবুর দাবি। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশে অনাস্থার ব্যাপার নেই। বঞ্চিত আমানতকারীর অধিকাংশ আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁদের জন্য ওই পদক্ষেপ করেছি। দক্ষিণ দিনাজপুরের ডেপুটি পুলিশ সুপার চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আইসির কাছে বিষয়টি জানতে চাইব।”

এ দিন বিকেলে বালুরঘাট থানার আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তালা মারার কোনও খবর জানা নেই। কোনও তরফেই কোনও অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নেব।”

তৃণমূলের বালুরঘাট টাউন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি শঙ্করবাবু বালুরঘাট পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার এলাকার একাধিক বাসিন্দা ভিভজিওর নামে ওই সংস্থা টাকা জমা করেন। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই সংস্থায় একাধিকবার ঘুরেও টাকা পাচ্ছিলেন না। সংস্থার তরফে ২৪ মাস পর মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ সঞ্চয়ের টাকা ফেরতের আশ্বাস দিলেও আমানতকারীরা রাজী হননি। ফলে আমি কাউন্সিলর হিসাবে ওয়ার্ডবাসীর হয়ে পদক্ষেপ করেছি। তাঁদের ইচ্ছাতেই তালা ঝোলানো হয়েছে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ওই সংস্থার অফিস বন্ধ থাকবে বলে কর্মীদের বলে দিয়েছি।”

ভিভজিওর নামে বেসরকারি ওই অর্থলগ্নি সংস্থাটি বছর তিনেক আগে শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকায় কার্যালয় খোলে। গোল্ড লোন দেওয়ার পাশাপাশি সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে তারা কারবার শুরু করে বলে অভিযোগ। এক মাস আগে থেকে মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও একাধিক আমানতকারী টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। এ দিন আমানতকারী শিশির মণ্ডল অভিযোগ করেন, “সঞ্চয় প্রকল্পে দু’দফায় ৩৬ হাজার টাকা এবং ফিক্স ডিপোজিটে ৩৭,৫০০টাকা রেখেছিলাম। জানুয়ারি মাসে প্রকল্প দু’টির মেয়াদ শেষ হলে ওই সংস্থায় গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে আমাকে একাধিকবার ঘোরানো হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলারের দ্বারস্থ হয়ে সুরাহা চেয়েছিলাম।”

এদিন ওই সংস্থায় গিয়ে দেখা যায় মাত্র দু’জন কর্মী। অফিস ইনচার্জ জয়া মণ্ডল বলেন, “মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হচ্ছিল। মাঝে সমস্যা হওয়ায় আমনতকারীদের কাছে কয়েক মাস সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। মেয়াদ ফেরত টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত ওই মাসগুলির সুদও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে এদিন আমাদের বের করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।”

সংস্থার পক্ষে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। সংস্থা সূত্রের খবর, ওই অর্থলগ্নি সংস্থার অধীনে ৬০ থেকে ৭০ জন এজেন্ট ছিলেন। বর্তমানে কমে এজেন্টের সংখ্যা ১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আমানতকারীর সংখ্যা কর্মীরা জানাতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE