Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মনের অসুখে অসহায় পরিবার

মাথাভাঙা দুই নম্বর ব্লকের পারাডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভানুরকুঠি এলাকায় ওই পরিবারের বাস। পরিবারের একমাত্র সুস্থ মানুষ শৈলেন সাহা রায়। তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান মানসিক ভারসাম্যহীন। এক ছেলে নিখোঁজ। বাকিদের চিকিৎসা করার টাকা পরিবারের হাতে নেই।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

স্নেহাশিস অধিকারী 
মাথাভাঙা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:১২
Share: Save:

এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। আর একজনকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাড়িতে। আরও দুই ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। একই পরিবারের চারজনের এমন অবস্থায় হতবাক গোটা গ্রাম।

মাথাভাঙা দুই নম্বর ব্লকের পারাডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভানুরকুঠি এলাকায় ওই পরিবারের বাস। পরিবারের একমাত্র সুস্থ মানুষ শৈলেন সাহা রায়। তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান মানসিক ভারসাম্যহীন। এক ছেলে নিখোঁজ। বাকিদের চিকিৎসা করার টাকা পরিবারের হাতে নেই। শৈলেনবাবু বলেন, “আনাজ বিক্রি করে সংসার চালাই। চিকিৎসার টাকা কোথায় পাব। তারপরেও বড় ছেলেকে একবার অনেক কষ্টে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুলি। কিছুদিন পরে আবার সেই একইরকম হয়ে যায়।’’ মাথাভাঙা দুই নম্বর ব্লকের বিডিও রজতরঞ্জন দাস বলেন, “বিষয়টি আমাকে আগে কেউ জানায়নি। ওই পরিবারের খোঁজ নিয়ে তাঁদেরকে মানবিক প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।”

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পরিবারের বড় ছেলে রাজু সাহা রায়। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়িতেই রাখা হয়েছে। মেজো ছেলে মেঘলাল মানসিক অসুস্থতা নিয়ে বছর খানেক আগে নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও, তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। ছোট ছেলে অজয়ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। শৈলেনবাবুর স্ত্রীও অসুস্থ। খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে শৈলেনবাবুর। তিনি বাজারে দোকান করে, তারপরে সংসারের কাজ করেন।

তাঁর আক্ষেপ, “এই আমার পরিবার। অথচ সরকারি কোনও সুযোগসুবিধে আমি পাইনি। অসহায় ভাবে দিন কাটাতে হয়। মাঝে মাঝে ঘরে খাবার থাকে না।” শৈলেনবাবুর ভাই সুনীলবাবু জানান, সারাদিন খাটুনির পর যা আয় হয় তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চালান তাঁর দাদা। তিনি বলেন, “আমরা খুব গরিব। ভেবে উঠতে পারছি না, কী করে ওদের চিকিৎসা করাবো।” তিনি জানান, বর্তমানে রাজুর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। দিন দিন সে হিংস্র হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “যত দিন যাচ্ছে টোটো (রাজুর ডাক নাম) আবোল তাবোল কথা বলছে। খুব রাগ তার। কাউকে যাতে কিছু না করে, সে জন্য নিরুপায় হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে রাজুকে।”

গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন বললেন, “কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সরকারি সাহায্য পেলে ওই পরিবারের খুবই উপকার হবে। অন্ততপক্ষে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা তো হবে পরিবারটির।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Problem Family Vegetable Seller
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE