সায়েশা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফুলের মতো ছোট্ট মেয়েটা ডেঙ্গিতে চিরতরে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে এটা জেনে স্তম্ভিত শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়া। পুর এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাল লাজপৎ রায়ের মোড়ে মোড়ে একই আলোচনা। তা হলে পের প্রাণঘাতী ডেঙ্গি ফিরে আসছে শিলিগুড়িতে? গত বছর শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছিল ১১ জনের বেশি। এ বছর সায়েশা বন্দ্যোপাধ্যায় (৭) নামে ওই শিশু সোমবার কলকাতার নার্সিংহোমে মারা যায়।
ঘটনার খবর পেয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওদের বাড়ি যাব।’’ শিলিগুড়িতে সরকারি হাসপাতাল তো বটেই বেসরকারি হাসপাতালেও যে ডেঙ্গির মোকাবিলা করার মতো কোনও পরিকাঠামো নেই, বাচ্চা মেয়েটির মৃত্যু তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মনে করছে শিলিগুড়ির বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সায়েশা তার পরিবারের সঙ্গে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে লালা লাজপৎ রায় রোডে থাকত। গত সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন ধরে জরে আক্রান্ত হওয়ার পর শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানো হয়, তবে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তার বাবা কিছুদিন আগেই তার নিজের ফেসবুকে মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি সম্পর্কেও পোস্ট করেছিলেন। তাকে যে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে কথাও তিনি লিখেছিলেন। সেখানে একটি নার্সিংহোমে সে মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বছর শিলিগুড়িতে ডেঙ্গিতে মারা যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। শৌমিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেবক রোডে একটি হোটেল চালান। মাস দুয়েক হল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উষা ভিলায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে থাকত সায়েশা। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার পরিস্থিতি থমথমে। তবে ওই ফ্ল্যাটের কোনও বাসিন্দাই তাদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও খবর পেয়েছেন। এলাকা থমথমে থাকলেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ জায়গায় ময়লা জমে রয়েছে। সায়েশার আবাসনের সামনে ব্লিচিং থাকলেও এলাকার বাকি অংশে তা নেই। বড় নর্দমার জায়গায় জায়গায় ঢাকনা দেওয়া। জল জমছে অনেকগুলি জায়গায়। পাশেই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নর্দমা জল জমে রয়েছে সেখানেও। ১৩ নম্বর এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে হরিজন বস্তি এলাকা। সেগুলির সামনে রাস্তার উপরেই অর্ধেক রাস্তা জুড়ে ছড়ানো রয়েছে জঞ্জাল। শুয়োর চড়ছে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে।
কেন জঞ্জাল পরিষ্কার হয় না? ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক দে’র দাবি, এলাকায় নিয়মিতভাবে জঞ্জাল পরিষ্কার করার চেষ্টা হয়। তবুও পুরসভা পর্যাপ্ত শ্রমিক দিচ্ছে না বলে সমস্যা হয়।’’
পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ এবং সচেতনতা দুটোই আমাদের জোরকদমে জোরকদমে চলছে। তবে নিজের নিজের এলাকায় কী হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদেরই দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy