Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মহানন্দায় ভাসালেন মেয়ের সব স্মৃতি

বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের কাছে চাউমিন খাওয়ার আবদার করেছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি। বাড়ির নীচে মুদি দোকান থেকে চাউমিনের প্যাকেট কিনে মেয়ের হাতে দিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন মা। ফিরে এসে আর খুঁজে পাননি মেয়েকে।

ঘটনাস্থল: সেই বাড়ির ছাদ। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: সেই বাড়ির ছাদ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর খাতা-বই কিনতে বেশ কয়েকবার ধারদেনাও করতে হয়েছে ভ্যানচালক বাবাকে। এ দিন বাঁধাই করা খাতা, আঁকার রঙিন পেন্সিল, ড্রইং খাতা সবই ভাসিয়ে দিয়েছেন মহানন্দা জলে। শনিবার সকালে ঘুপচি ঘরে গিয়ে দেখা গেল বড় মেয়ের কোনও স্মৃতিই রাখেনি বাবা-মা। স্কুল ব্যাগটাও ভাসিয়ে দিয়েছেন শ্মশানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দাতে। বৃহস্পতিবার রাতে মায়ের কাছে চাউমিন খাওয়ার আবদার করেছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি। বাড়ির নীচে মুদি দোকান থেকে চাউমিনের প্যাকেট কিনে মেয়ের হাতে দিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন মা। ফিরে এসে আর খুঁজে পাননি মেয়েকে। গভীর রাতে ছাদ থেকে উদ্ধার হয় মেয়ের নিথর দেহ।

শ্মশান থেকে ফিরতেই রাত কাবার হয়ে গিয়েছিল। সকালে পাড়ারই কয়েকজন এসে থানায় ডেকে নিয়ে যায় দম্পতিকে। মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে থানায় যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হন তাঁরা। তবে থানায় গিয়ে রাজনৈতিক স্লোগান শুনে, পতাকা দেখে ঘাবড়ে যান। কোনওমতে বাড়ি ফিরতেই কয়েকজন যুবক ফের তাঁদের সঙ্গে থানায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। সদ্য ন’বছরের মেয়েকে হারানো ওই দম্পতি এ বার সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘‘রাজনীতি করতে হলে আমাদের ডাকবেন না।’’

নাবালিকার মা বলেন, ‘‘কোনও দলের পতাকা ধরলে আমার মেয়ে ফিরে আসবে না। আমাদের মেয়েকে নিয়ে রাজনীতি হোক চাই না।’’ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ন’বছরের স্কুলছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শিলিগুড়ি। নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়।

শনিবারও দিনভর শিশু ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় থানায় বিক্ষোভ, স্মারকলিপি ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবি চললেও সন্ধে হতেই উত্তেজনা ছড়ায় সেবক রোডের জনতানগরে। সন্ধেবেলা মৃত শিশুর অভিভাবকদের নিয়ে মোমবাতি মিছিল করেন শতাধিক বাসিন্দা। মিছিলের সঙ্গে ছিল পুলিশ। পরে সেবক রোড অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পুলিশ কোনওমতে বাসিন্দাদের জনতানগরের রাস্তায় ঢোকায়। তারপরেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিশুর অভিভাবকরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তার মালিক-সহ তিনজনকে পুলিশ জেরা শুরু করেছে। এই খবরের ভিত্তিতে মিছিল থেকে ওই বাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ও ইটবৃষ্টি শুরু হয়। লাঠি হাতে তেড়ে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করেও ঢিল ছোঁড়া শুরু হয়। এসিপি অচিন্ত্য গুপ্তও আহত হন। পরে বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। রাতে এলাকায় র‌্যাফ, কমব্যাট ফোর্স নামানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE