হতভম্ব: কাটা মাংস নিয়ে বসে ব্যবসায়ী। নিজস্ব চিত্র
বড় একটা বাজারের থলে ছুড়ে দিয়ে চোখ নাচিয়ে ‘বাবু’ বললেন, ‘‘ভাল কাতলা থাকলে, ৩৬ কেজি কেটে দে। কম হলে চলবে না।’’ মাছের পরিমাণ শুনেই বোঝা গেল ‘খদ্দেরবাবু’ বেশ শাঁসালো। সঙ্গে রয়েছেন ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পরিচিত প্রবীণ চালক। হিন্দি-বাংলা মিশিয়েই তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন তিনি। তত ক্ষণে তাঁর কথা, চাল-চলন, চুলের ছাঁটে ‘স্পষ্ট’ যে তিনি দোমহনির ‘আরপিএফ কর্মী’। ধারালো বঁটি দিয়ে একের পর এক মাছের পিস কাটা চলছে। মাঝপথে কাজ থামিয়ে ‘বাবু’ জানালেন, তাঁর ২ হাজার টাকার খুচরো প্রয়োজন, মাংস কিনতে যাবেন। মাছের দাম তো পাবেনই, এই ভেবে ব্যবসায়ীও বাক্স থেকে টাকা বের করে দিলেন।
এই ভাবেই ময়নাগুড়ি বাজারের বাকি আরও তিন দোকান এবং ওই গাড়ির চালকের কাছ থেকে টাকা ভাঙানোর নাম করে প্রায় দশ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে এই তাজ্জব ঘটনায় হতভম্ব গোটা বাজার।
মাছের দোকান থেকে খুচরো নিয়ে চালক সুধীর সরকারকে সঙ্গে করেই ‘বাবু’ গিয়েছিলেন মাংসের দোকানে। ২৪ কেজি মুরগি কাটতে দিয়ে সেখান থেকেও একই কায়দায় চার হাজার টাকার খুচরো নেন। তাঁর কথা থেকেই জানা যায়, ব্যারাকে এ দিন বিপুল খানাপিনার আয়োজন হয়েছে। তার জন্যই এই রাজকীয় কেনাকাটা। এর পর পাঁঠার মাংসের দোকানে ব্যাবসায়ীর থেকে আরও দু’হাজার টাকার খুচরো নেন ‘বাবু’। সুধীরবাবুকে বাজারের লিস্ট ধরিয়ে সেখানেই অপেক্ষা করতে বলেন তিনি। একাই সব্জির দোকানে গিয়ে ৫০০ টাকার খুচরো নেন। সব্জির ব্যবসায়ীকে ‘বাবু’ বলেছিলেন, ‘‘সব ব্যাগে ভরে দে। শালপাতার থালা কিনে আনি।’’ তার পর অবশ্য তিনি আর ফেরেননি।
সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরে মাছ-মাংস-সব্জি ব্যবসায়ীরা বুঝলেন তাঁদের টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছেন ‘বাবু’। এ দিন সকালে অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে দোমহনি আরপিএফ ব্যারাকে যাওয়ার জন্য সুধীরবাবুর গাড়িটি ভাড়া করে। মাঝ রাস্তায় তাঁকে সে জানায়, ব্যারাকে পার্টি আছে, তাই বাজারে করতে হবে। বাজারে সে নিজেই সুধীরবাবুকে সঙ্গে থাকতে বলে। তাঁর কাছ থেকেও এক হাজার টাকার খুচরো নেয় সে। সুধীরবাবু বলেন, ‘‘এত বছর এই এলাকায় গাড়ি চালাচ্ছি। এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম।’’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিজেকে আরপিএফ পরিচয় দেয় অভিযুক্ত ব্যক্তি। দোমহনির আরপিএফ ব্যারাক থেকে মাঝেমধ্যেই জওয়ানরা এসে প্রচুর পরিমাণে বাজার করেন। দুপুরে ব্যবসায়ীরা ব্যারাকে যোগাযোগ করলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, পার্টি হওয়ার কোনও কথাই নেই। ব্যারাক থেকে কেউ এ দিন বাজার করতেও যাননি বলে দাবি করা হয়।
অভিযুক্তের কথায় তিনশোরও বেশি মাছের পিস কেটেছিলেন বিমল দাস। এ দিন বিকেল পর্যন্ত মাছের পিসগুলো প্লাস্টিক বন্দি রয়েছে। ওগুলো নিয়ে কী করবেন তা নিয়ে চিন্তিত বিমলবাবু। মাংস ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘‘এমন তো কতই হয়। খদ্দেররা অর্ডার দিয়ে অন্য কিছু কেনার জন্য খুচরো চান। আমরাও বিশ্বাস করে দিয়ে দেই।’’ অভিযুক্ত ব্যক্তির চালচলন এমন ছিল যে দেখে কারও অবিশ্বাস হয়নি, দাবি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুমিত পালের। থানায় অভিযোগ দায়েরের কথাও ভাবছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy