Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

যেন ফিরে এলেন দানা মাঝি, ভাইকে পিঠে নিয়ে টানা দু’ঘণ্টা

ওড়িশার দানা মাঝির সঙ্গে কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন নিজের? এত ক্ষণ ধরে ১৮ বছর বয়সী ভাইকে কাঁধে নিয়ে ঘুরেছেন। এ বারে ভাইয়ের ভর্তির সুপারিশ হয়েছে।

 বড়ভাই: ছোটকে পিঠে নিয়ে হাসপাতালে গণেশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

বড়ভাই: ছোটকে পিঠে নিয়ে হাসপাতালে গণেশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা 
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৩
Share: Save:

ওড়িশার দানা মাঝির সঙ্গে কি মিল খুঁজে পাচ্ছেন নিজের? এত ক্ষণ ধরে ১৮ বছর বয়সী ভাইকে কাঁধে নিয়ে ঘুরেছেন। এ বারে ভাইয়ের ভর্তির সুপারিশ হয়েছে। বসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছেন নকশালবাড়ি বেলগাছি চা বাগান এলাকার গণেশ বরাইক। তার মধ্যে এমন নাম শুনে কিছুটা চমকে গেলেন।

হাসপাতাল থেকে গাড়ি বা ভ্যান না পাওয়ায় ওড়িশার দানা মাঝি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে কয়েক মাইল হেঁটে শ্মশানে গিয়েছিলেন। না, গণেশ এই নাম শোনেননি। তাঁর ছোট ভাইয়ের ক্ষেত্রে এত খারাপও ঘটেনি। তবু মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গণেশ ও তাঁর ভাইকে দেখে দানার কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল।

আঠারো বছরের ভাই বিষ্ণু বরাইক দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছেন। গণেশই জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বুকে ব্যথা ও কাশি। সম্প্রতি যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। প্রথমে নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। বিষ্ণু এখন এতটাই দুর্বল যে হেঁটে হেঁটে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যেতে পারছেন না।

গণেশ জানান, এ দিন টোটোয় চড়ে ভাইকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসেন তিনি। নেমে প্রথমেই খোঁজ করেন, কী ভাবে ভাইকে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের বহির্বিভাগে যাওয়া যায়। কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়ে দেন, ট্রলি, হুইলচেয়ার পেতে হলে সুপারের অফিসে যেতে হবে। গণেশের দাবি, ভাইকে রেখে সুপারের অপিসে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি জরুরি বৈঠকে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শেষে ভাইকে পিঠে চাপিয়েই বহির্বিভাগে নিয়ে যান গণেশ। সেখানে টিকিট করানোর পরে ফের পিঠে নিয়ে ডাক্তারের ঘরে যান। ভর্তির সুপারিশ করেন চিকিৎসক।

তখন আবার ভাইকে পিঠে চাপিয়ে সুপারের ঘরের দিকে যান গণেশ। সেখানে ট্রলি পাননি বলে অভিযোগ। এর পরে ৪২ কেজি ওজনের ভাইকে নিয়ে কয়েক বার দাঁড়িয়ে শেষমেশ ওয়ার্ডে পৌঁছন তিনি। ঘড়িতে তখন বেলা পৌনে দুটো। গণেশ বলেন, ‘‘একটা ট্রলি বা হুইল চেয়ারের জন্য এত ধরাধরি, লেখালেখি করতে গেলে চিকিৎসায় দেরি হয়ে যাবে। তাই পিঠেই নিলাম। এখন চাই ভাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হোক।’’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘‘ট্রলি, হুইলচেয়ার অনেকে নিয়ে আর ফেরত দেন না। কিছু চুরিও হয়েছে। কিন্তু, আমার অফিসেই ৪টি ট্রলি রয়েছে। পরিচয়পত্রের জেরক্স দিয়েই তা নেওয়া যায়।’’ শুধু রোগী সহায়তা কেন্দ্রের লোকেরা নন, এমন দৃশ্য চোখে পড়লেই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ফের মনে করিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুপার। গণেশ অবশ্য খুশি, তাঁর ভাইয়ের তো চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Medical Dana Majhi Emotional
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE