Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রীকে পিষে দিল বাস

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মোহিতনগরের কাছে জাতীয় সড়কের নিয়ন্ত্রণ কার্যত চলে যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে। দাউ দাউ করে তিনটি সরকারি বাস পরপর জ্বলছে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলেও আসে। অভিযোগ, প্রথমে বিক্ষোভকারীরা দমকলকে কাজই শুরু করতে দেয়নি। বাসগুলি অনেকটা পুড়ে যাওয়ার পরে দমকলের ইঞ্জিন থেকে জল ছেটানো শুরু হয়। 

 জ্বলন্ত: তখনও আগুন জ্বলছে একাধিক বাসে। ইনসেটে মৃত ছাত্রী।

জ্বলন্ত: তখনও আগুন জ্বলছে একাধিক বাসে। ইনসেটে মৃত ছাত্রী।

বিল্টু সূত্রধর
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

জাতীয় সড়কে সরকারি বাসের ধাক্কায় স্কুটি থেকে রাস্তার মাঝে ছিটকে পড়েছিল স্কুল ছাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, স্কুটিকে ধাক্কা দিয়ে তাকে পিষে দেয় বাসটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তৃষা চক্রবর্তীর (১৭)। শনিবার সকালে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মোহিতনগরের ঘটনা। স্কুটি চালিয়ে তৃষাকে টিউশন ক্লাসে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার দাদা। বাসের ধাক্কায় তিনিও পড়ে যায়, তাঁর হাত ভেঙেছে বলে পরিবারের দাবি। দুর্ঘটনার পরেই সরকারি বাসের চালক এবং কনডাক্টর পালিয়ে যায় বলে দাবি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জন এসে বাসটিতে ভাঙচুর চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা গিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হয় পথ অবরোধ। তার পরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে লোকজন। অবরোধে দাঁড়িয়ে পড়া পরপর পাঁচটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায় জনতা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় তিনটি বাসে। বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মোহিতনগরের কাছে জাতীয় সড়কের নিয়ন্ত্রণ কার্যত চলে যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে। দাউ দাউ করে তিনটি সরকারি বাস পরপর জ্বলছে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলেও আসে। অভিযোগ, প্রথমে বিক্ষোভকারীরা দমকলকে কাজই শুরু করতে দেয়নি। বাসগুলি অনেকটা পুড়ে যাওয়ার পরে দমকলের ইঞ্জিন থেকে জল ছেটানো শুরু হয়।

পরের পর বাস ভাঙচুরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাস যাত্রীরা। বাসে যাত্রী থাকাকালীনই পাথর ছোড়া শুরু হয়। যাত্রীদের কয়েক জন তখন আতঙ্কে কেঁদে ফেলেন। পরে পুলিশ, র‌্যাফ এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রায় চার ঘণ্টা জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগকারী এই জাতীয় সড়ক দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয় বহু মানুষকে। হিংসার ঘটনায় পুলিশ চার জনকে ধরেছে।

জেলা পুলিস সুপার অভিষেক মোদী বলেন, “আমরা চার জনকে ধরেছি। রানিনগর থেকে লোকজন এসে বাসে আগুন দিয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।”

মৃত ছাত্রীর বাড়ি রানিনগরে। শনিবার সকালে বাড়ি থেকে দাদার স্কুটিতে বসে টিউশন নিতে অসম মোড়ে দিকে আসছিল তৃষা চক্রবর্তী। সে রানিনগর রবীন্দ্রনাথ হাইস্কুলের ছাত্রী। গুরুতর জখম হয়েছেন ছাত্রীর দাদা ঋষভ। তিনি স্থানীয় পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র। তাঁর হাত ভেঙে শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত লাগে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে এই এলাকায় দুর্ঘটনা হচ্ছে। দু’দিন আগেও এক যুবক দুর্ঘটনায় মারা যায়।

তাদের বক্তব্য, জাতীয় সড়কের দু’দিকে বালির স্তূপ পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। সড়ক সম্প্রসারণের কাজের জন্য বালি এনে রাস্তাতেই ফেলে

রাখা হয়েছে। তার জেরে রাস্তা অপ্রশস্ত হয়ে রয়েছে। রাস্তায় কোনও ডিভাইডার না থাকায় দু’দিকের গাড়িগুলির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট।

তৃষার বাবা স্কুল শিক্ষক মতিলাল চক্রবর্তী বলেন, “মেয়েটা বিমান সেবিকা হতে চেয়েছিল। কবিতা লিখত। ওকে ঘিরে আমাদেরও অনেক স্বপ্ন ছিল। যাঁদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা তাঁদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE