Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, পরিষেবা দিতে বাগানে গেল প্রশাসন

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চা বাগানের শ্রমিকদের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প পৌঁছে দিতে এ ভাবেই উদ্যোগী হল আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন৷ রবিবার কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের আদলেই গোটা ডুয়ার্সকন্যা পৌছে গেল কালচিনির বন্ধ মধু চা বাগানে৷

পাশে: মঞ্চে এক খুদের সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

পাশে: মঞ্চে এক খুদের সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
কালচিনি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৭
Share: Save:

বাগানের দুয়ারে সরকার৷

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চা বাগানের শ্রমিকদের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প পৌঁছে দিতে এ ভাবেই উদ্যোগী হল আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন৷ রবিবার কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের আদলেই গোটা ডুয়ার্সকন্যা পৌছে গেল কালচিনির বন্ধ মধু চা বাগানে৷

বাগানের শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে সচেতন করার সঙ্গে সরকারি প্রকল্প পেতে তাদের কী কী সমস্যা হচ্ছে তাও শোনেন জেলার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা৷ যদিও বিরোধীদের কটাক্ষ, লোকসভা নির্বাচনে চা বলয়ের মানুষকে কাছে টানতেই প্রশাসনকে এভাবে কাজে লাগাচ্ছে সরকার৷

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল বিরোধীরা৷ তারপরও দেখা যায় উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে, বিশেষ করে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় খুব একটা ভাল ফল হয়নি তৃণমূলের৷ উল্টে অনেক জায়গাতেই নিজেদের ভোট বাড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি৷ দলেরই অনেক নেতার মতে, রাজ্য সরকারের অনেক প্রকল্পই চা বলয়ের নীচু তলার মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছয় নি৷ তার জেরেই চা বলয়ের মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই সেখানে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মরিয়া বিজেপি৷

এই পরিস্থিতিতে সরকারি সমস্ত প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা চা বলয়ের প্রতিটি মানুষ যাতে পান সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দিনকয়েক আগে উত্তরকন্যায় আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মলও রবিবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এ দিন আমরা জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্তা ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে মধু চা বাগানে এসেছি৷ যাতে সরকারি কোনও প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পেতে শ্রমিকদের সমস্যা না হয়৷ সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলি সম্পর্কেও তারা সচেতন থাকেন৷”

প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কালচিনির মধু চা বাগান৷ একে তো এতদিন ধরে কাজ হারিয়ে রীতিমত বেকায়দায় বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলি৷ সেই সঙ্গে সরকারি নানা প্রকল্পের সুযোগ ঠিকমতো না মেলাতেও তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। দিনকয়েক আগে জেলাশাসক বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কথা শোনেন৷ তারপরই এ দিন বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বাগানে পৌঁছন তিনি৷ বাগানের একটি স্কুল লাগোয়া মাঠে হয় অনুষ্ঠান৷ সেখানে ২৩টি স্টল হয়৷ যার একটিতে ছবির প্রদর্শনী বাদ দিলে বাকি ২২টিতেই বিভিন্ন দফতরের কর্মী আধিকারিকেরা ছিলেন৷ চা বলয়ের অনেক বাসিন্দা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ওই স্টলগুলিতে গিয়ে কথা বলেনযান৷ জেলাশাসক জানান, মধু চা বাগানের সঙ্গে অন্য বাগানগুলিতেও এই অনুষ্ঠান হবে৷

তবে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে ঘিরে রাজনৈতিক কাজিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায়৷ বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির জন্যই চা শ্রমিকেরা সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পান না৷ ফলে তারা তৃণমূলের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন৷ আর সেজন্যই খোদ তৃণমূলের সরকারও এখন আর তাদের দলের নেতাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না৷ তাই প্রশাসনকে এ ভাবে ময়দানে নামাচ্ছে৷’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা পাল্টা বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারটাই তো তৃণমূলের৷ আর সরকারের প্রকল্পের সুবিধা যাতে মানুষ পান তা তো প্রশাসনই দেখবে৷ বিষয়টা না বুঝে বিজেপি নেতারা পাগলের মত কথা বলছেন৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE