Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লড়াইয়ের আরেক নাম কোয়েল

চাউমিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে হতো বলে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া হতো না শিলিগুড়ির অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা কোয়েল মন্ডলের।এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে কোয়েল। তার মোট নম্বর ২১৯। সে বাংলায় ৫২, ইংরেজিতে ৪৩, ইতিহাসে ৪৩, হোম সায়েন্সে ৪১, পলিটিক্যাল সায়েন্সে ৪০ পেয়েছে। তাই অভাবের সংসারে চোখের সামনে শুধু অন্ধকারই দেখছে কোয়েল।

জয়: পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই কোয়েলের। নিজস্ব চিত্র

জয়: পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই কোয়েলের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ০২:২২
Share: Save:

প্রবাদ-প্রবচনগুলো বোধহয় আজও তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। ইচ্ছে থাকলেই যে উপায় হয় এই কথাটা আবার সত্যি করে দেখাল কোয়েল।

চাউমিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে হতো বলে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া হতো না শিলিগুড়ির অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা কোয়েল মন্ডলের। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত কাজ করে দিনে ৭০ টাকা আয় হত কোয়েলের। তার রোজগার আর মা ববিতার স্কুলের মিড ডে মিলের রান্না করে মাসে এক হাজার পাঁচশো টাকা মতো হত। এই দিয়েই সংসার চলত তাদের। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে কোয়েল। তার মোট নম্বর ২১৯। সে বাংলায় ৫২, ইংরেজিতে ৪৩, ইতিহাসে ৪৩, হোম সায়েন্সে ৪১, পলিটিক্যাল সায়েন্সে ৪০ পেয়েছে। তাই অভাবের সংসারে চোখের সামনে শুধু অন্ধকারই দেখছে কোয়েল।

শিলিগুড়ির রবীন্দ্রনগর গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী কোয়েলের মাত্র একজন গৃহশিক্ষক ছিল। অভাবের কথা ভেবে তিনিও প্রতি মাসে টাকা কম নিতেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দূর্বা ব্রক্ষ্ম বলেন, ‘‘আমরা ওকে সবরকমভাবেই সাহায্য করি। সে বই খাতা হোক বা অন্য কিছু। মেয়েটা পড়ার জন্য একটু বেশি সময় পেলেই আরও ভাল ফল করত।’’

কোয়েলের পরিবারে মা ছাড়াও তিন বোন আর এক ভাই রয়েছে। বড় দিদি বিয়ের পর থেকেই স্বামী পরিত্যক্তা। অপর দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একমাত্র ভাই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই টাকার অভাবে পড়া বাদ দিয়ে দিয়েছে। বাবা তাদের সংসারে থাকে না। কাজেই বাধ্য হয়েই কোয়েল এবং তার মা ববিতাকে কাজ করতে হয়। প্রতিদিন কাজের শেষে রাতে পড়তে হত কোয়েলকে।

কোয়েল জানায়, ‘‘স্কুলে প্রতিদিন যেতে পারব না বলে আগেই জানিয়েছিলাম। স্কুলের বড় দিদিমণি না থাকলে তো পড়াটাই বাদ দিয়ে দিতে হতো। ইচ্ছে আছে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়ার। কিন্তু হয়তো আর পড়া হবে না। কারণ কলেজে পড়তে গেলে খরচ অনেক বেশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Results 2018 Poverty Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE