রায়গঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল শিক্ষা সংগ্রাম মঞ্চের। —নিজস্ব চিত্র।
ঝুলে থাকা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা ও সরকারি দফতরে শূন্য পদে যোগ্য বেকারদের নিয়োগ করার দাবিতে আন্দোলনে নামল শিক্ষিত বেকারদের সংগঠন শিক্ষা সংগ্রাম মঞ্চ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সংগঠনের সদস্যরা প্রায় ১৫ মিনিট রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এরপর সংগঠনের তরফে শিলিগুড়ি মোড় থেকে শহরের ঘড়ি মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করে ঘড়ি মোড় এলাকার রাজ্য সড়কও ১০ মিনিট অবরোধ করা হয়। পাশাপাশি, সংগঠনের তরফে শহরের সুপারমার্কেট, মোহনবাটী ও বিদ্রোহীমোড় এলাকাতেও একাধিক পথসভা করা হয়।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রায়গঞ্জের ১৫০ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ও তরুণী কনভেনশন করে ওই সংগঠন তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যেই জেলার কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, হেমতাবাদ, করণদিঘি, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, ইসলামপুর ও চোপড়া ব্লকের শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে সংগঠনের ব্লক ভিত্তিক কমিটি গঠন করার কাজ শুরু হয়েছে বলেও এদিন মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে। মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু মিশ্রের দাবি, তাঁদের সংগঠন অরাজনৈতিক। ডান-বাম সব দলের সমর্থক শিক্ষিত বেকার যুবক ও তরুণীরা চাকরির দাবিতে একমত হয়ে ওই সংগঠন গড়ে তুলেছেন। গত প্রায় চার বছর ধরে ঝুলে থাকা শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা ও সরকারি দফতরে শূন্যপদে শিক্ষিত বেকারদের নিয়োগের দাবিতে সংগঠনের সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য রায়গঞ্জে আন্দোলন শুরু করলেন। ধাপে ধাপে সেই আন্দোলন জেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তাঁর দাবি।
শান্তনুবাবুর কথায়, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মঞ্চের তরফে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) ও জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে। তাতেও রাজ্য সরকারের টনক না নড়লে ভবিষ্যৎ জীবনের স্বার্থে বেকাররা আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
জেলাশাসক রণধীর কুমার ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নারায়ণ সরকার বলেন, শিক্ষক ও সরকারি কর্মী নিয়োগের বিষয়টি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। এক্ষেত্রে তাঁদের কিছু করণীয় নেই।
মঞ্চের অভিযোগ, ২০১২ সালে রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা নিয়েছে। রাজ্য জুড়ে প্রায় দু’লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক ও তরুণী সেই টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে টেট উত্তীর্ণদের সরকারিভাবে তিন বছর মেয়াদী শংসাপত্র দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৫ সালে অগস্ট ও অক্টোবর মাসে ফের প্রাথমিক ও হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। ফলে জেলার লক্ষাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক ও তরুণীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। রাজ্য সরকার বিভিন্ন সরকারি দফতর ও হাইস্কুলে শূন্যপদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগ করে চলেছেন। ফলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান হবে কি না, তা নিয়ে বেকারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বেকারদের বিপথগামী হওয়ারও আশঙ্কা বাড়ছে বলে মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে।
মঞ্চের অপর যুগ্ম সম্পাদক পার্থ সাহার অভিযোগ, গত চার বছর ধরে রাজ্য সরকার শিক্ষিত বেকারদের শিক্ষক ও সরকারি দফতরে নিয়োগের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করে চলেছে। আর সেই ফাঁকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বিভিন্ন স্কুলে ও সরকারি দফতরে ঢালাও নিয়োগ শুরু হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের এই দ্বিচারিতা আমরা মানব না, তাই জীবন জীবিকার স্বার্থেই শিক্ষিত বেকার যুবক ও তরুণীরা মঞ্চ গড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy