Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

দুই মন্ত্রীকে কালো পতাকা যুব কংগ্রেসের

এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৈঠক করতে গিয়ে কালো পতাকা দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ।

কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ।

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৈঠক করতে গিয়ে কালো পতাকা দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হওয়ার এত দিন পরে কেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এলেন, সেই প্রশ্ন তুলে যুব কংগ্রেস কর্মীরা এই বিক্ষোভ দেখান। মন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর অভিযোগে পুলিশ কয়েক জন যুব কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে।

বিক্ষোভকারীদের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশ তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁদের জোর করে হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। এর পরেই তাঁরা রাস্তায় বসে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পুলিশের বড় বাহিনী এসে জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি মাধব সিংহ-সহ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এনসেফ্যালাইটিসে ইতিমধ্যে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবী গত শনিবার উত্তরবঙ্গে আসেন। ময়নাগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সোমবার তিনি মেডিক্যাল কলেজে যান। কেন তিনি প্রথম দিনই মেডিক্যাল কলেজে এলেন না, যুব কংগ্রেসের তরফে এ দিন সেই প্রশ্ন তোলা হয়। এ দিন বৈঠকের পরে আবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এনসেফ্যালাইটিসে মৃতদের যে পরিসংখ্যান দেন, তার সঙ্গে পুরোনো রিপোর্টের অসঙ্গতি রয়েছে। চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য দাবি করেন, এ দিনের পরিসংখ্যানই ঠিক। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।


গ্রেফতার করছে পুলিশ।

এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, রাজ্য স্বাস্থ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পালকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। বৈঠক করেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সুপার-সহ প্রতিটি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে। এর পরেই গত বছরের হিসেবের সঙ্গে তুলনা করে তিনি দেখান, চলতি বছরে এনসেফ্যালাইটিসের অবস্থা মোটেও আয়ত্তের বাইরে নয়। বরং, সব ঠিকঠাকই চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ দিন পর্যন্ত যাঁদের এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে তাঁরা বেশির ভাগেরই এনসেফ্যলাইটিস নয়। কিন্তু লক্ষণ দেখে এইএস-এ ঢুকে গিয়েছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।’’ তাঁর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এ বার মৃত ৫৬ জনের মধ্যে ২৪ জনের এনসেফ্যালাইটিস ছিল। বাকিরা অন্য কোনও রোগে মারা গিয়েছেন। কিন্তু, তাঁদের এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ ছিল। গত বছর এই সময় পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিসে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫৫ জন। সেখানে চলতি বছরে তা মাত্র ৫৬। গত বছরে জেই ছিল ৪১ জন। এ বার সেই সংখ্যা ২৪ বলে দাবি করেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে কোচবিহারের মাথাভাঙার আরতি বর্মনের (২৮) মৃত্যু হয়। তিনি ৩০ জুলাই খিঁচুনি ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ১৪। চন্দ্রিমাদেবীর দাবি, যে সব এলাকায় বয়স্কদের টীকাকরণ হয়েছিল, সেখানে এক জনও মারা যায়নি। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের ন’টি ব্লকে বয়স্কদের টীকাকরণ হয়েছে। তার মধ্যে জলপাইগুড়ির নাগরাকাটাও রয়েছে। এই ব্লকগুলিতে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের কেউ মারা যায়নি। দু’দিন আগেই নাগরাকাটার ৬০ বছরের ব্যক্তির এক মৃত্যু প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দাবি, ‘‘ওই তথ্য ঠিক নয়।’’ তবে উত্তরবঙ্গের বাকি ব্লকগুলিতেও টীকাকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। দ্রুত তা করা হবে বলে আশ্বাসও দেন।

জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি মাধব সিংহ, জেলা কো-অর্ডিনেটর বাবলু সরকার-সহ অন্য নেতারা এ দিন মন্ত্রী আসার আগেই তাঁর পদত্যাগ দাবি করে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে দুই মন্ত্রী-সহ অন্যরা অন্য রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন শুনে সেখানে গিয়ে তাঁরা কালো পতাকা দেখান। মাধববাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা নীরবে কালো পতাকা দেখানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের আক্রমণ করে। আমরা কোনও আইন ভাঙিনি।’’ শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পশ্চিম) মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘’২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা, সাইলেন্স জোনে চেঁচামেচি করায় তাঁদের ধরা হয়েছিল।’’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কংগ্রেস কী করেছে তা জানি না। সেটা পুলিশ দেখবে।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবুও এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

এ দিনই শিলিগুড়িতে এসেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি অবশ্য মেডিক্যাল কলেজে যাননি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমি গেলেই তো সেখানকার সুপার, অধ্যক্ষ, চিকিৎসকদের বদলি হতে হবে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE