Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
বিপন্ন বন্যপ্রাণ

আহত চিতাবাঘটির মৃত্যুতে ক্ষোভ

বন দফতর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হল না। মারা গেল আহত চিতাবাঘটি। বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় ফের এক বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমী মহলে।

অাহত: তাসাটি চা বাগানের কাছে রাস্তায় এ ভাবেই পড়ে ছিল সেই চিতাবাঘটি। নিজস্ব চিত্র

অাহত: তাসাটি চা বাগানের কাছে রাস্তায় এ ভাবেই পড়ে ছিল সেই চিতাবাঘটি। নিজস্ব চিত্র

অর্ণব সাহা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

বন দফতর চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হল না। মারা গেল আহত চিতাবাঘটি। বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় ফের এক বন্যপ্রাণীর মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমী মহলে।

শনিবার বিকেলে ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানের সামনে গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় মহিলা চিতাবাঘটি। সোমবার রাতে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে মারা যায় সেটি। মাদারিহাটের রেঞ্জার খগেশ্বর কার্জি বলেন, ‘‘মৃত চিতাবাঘটির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন গাড়ির ধাক্কায় যেভাবে প্রাণীটি মাথায় ও কোমরে চোট পেয়েছে তাতে সেটির বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।’’ ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের কেয়ারটেকার পার্থসারথী সিংহ বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না।’’

সোমবারের ঘটনা মিলিয়ে ২০১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত গাড়ির ধাক্কায় ডুয়ার্সে তিনটি চিতাবাঘের প্রাণ গেল। ২০১৬ সালে গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছিল দু’টি চিতাবাঘ। তবে শুধু চিতাবাঘই নয়। গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া লাটাগুড়ি থেকে মালবাজারগামী জাতীয় সড়ক এবং ডুয়ার্সের বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় রোজই গাড়ি চাপা পড়ে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে রয়েছে বাইসন, ময়াল, শঙ্খচূড়-সহ একাধিক বিপন্ন বন্যপ্রাণী। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছে অপরাধীরা। পরেও তাদের কোনও শাস্তি হয়নি। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, এমন ঘটনা ঠেকাতে চালকদের খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২৯ জানুয়ারি, ২০১৭: নাগরাকাটা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু চিতাবাঘের।

৯ জুন, ২০১৭: নাগরাকাটার নন্দু মোড় এলাকায় সংলগ্ন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু চিতাবাঘের।

২৩ অগস্ট, ২০১৭: ওদলাবাড়ির ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট বাঘরোল।

১৮ জানুয়ারি, ২০১৮: লাটাগুড়ির মহাকাল ধামের কাছে গাড়ির
ধাক্কায় মৃত্যু বাইসনের।

চাপড়ামারি বনাঞ্চলের মধ্যে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে কালীখোলা ব্রিজের উপরে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু চিতল হরিণের।

৮ মার্চ, ২০১৮: জলদাপাড়ায় হলং সেতুর সামনে গাড়ির ধাক্কায় আহত সম্বর হরিণ

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮: ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানের সামনে জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় আহত চিতাবাঘ, পরে মৃত্যু।

পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির অভিযোগ, গাড়ির ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঠেকাতে এর আগে বন দফতরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে বসে ঠিক হয়েছিল রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লাটাগুড়ি থেকে মালবাজারগামী জাতীয় সড়কের জঙ্গলের রাস্তায় ভারী যানবাহন চলবে না। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বসবে চেকপোস্ট, সিসি ক্যামেরা। তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘‘চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনাটি উদ্বেগের। বনাঞ্চল এলাকার রাস্তাগুলি দিয়ে গাড়ি আস্তে চালানোর ব্যাপারে নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। এ বার কড়া পদক্ষেপ করার কথা ভাবছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopard Forest Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE