Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দু’দিন পরেও দুষ্কৃতীরা অধরা, ক্ষোভ ইটাহারে

দু’দিন পেরিয়ে গেলেও উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকায় গয়না ব্যবসায়ী পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি ও পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। গত সোমবার রাত ২টা নাগাদ ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দুষ্কৃতীর দল মুখে কালো কাপড় বেঁধে চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা অলঙ্কার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ওই পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ১৭ ভরি সোনার অলঙ্কার ও চারটি মোবাইল লুঠ করে পালায় বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

দু’দিন পেরিয়ে গেলেও উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকায় গয়না ব্যবসায়ী পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি ও পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। গত সোমবার রাত ২টা নাগাদ ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দুষ্কৃতীর দল মুখে কালো কাপড় বেঁধে চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা অলঙ্কার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ওই পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ১৭ ভরি সোনার অলঙ্কার ও চারটি মোবাইল লুঠ করে পালায় বলে অভিযোগ। পালানোর সময়ে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ! ওই ঘটনায় অল্পের জন্য কয়েকজন পুলিশকর্মী প্রাণে বেঁচে গেলেও বোমার আঘাতে পুলিশের একটি গাড়ির আয়না ভেঙে যায়! পুলিশের দাবি, পুলিশ তাড়া করে ছয় রাউন্ড গুলি চালিয়েও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। একেই ঘটনার দিন পুলিশ দুষ্কৃতীদের সামনে পেয়েও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। অন্যদিকে, ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বুধবার নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশ। উল্লেখ্য, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের হাতের নাগালে পেয়েও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় মঙ্গলবার সকালে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রায় তিন ঘণ্টা স্থানীয় চূড়ামণ-চাঁচল রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের দাবি, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীরা মালদহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার দাবি, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। ঘটনার দিন ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্রই ইটাহার থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় বেশি থাকায় ও তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ায় পুলিশ তাদেরে গ্রেফতার করতে বাধা পায়। তা সত্ত্বেও পুুলিশ দুষ্কৃতীদের পিছু ধাওয়া করে গুলি চালিয়ে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করেছিল। আশা করছি, দুষ্কৃতীদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতির খবর পেয়ে ওইদিন রাতে ইটাহার থানা থেকে দুজন অফিসার সহ ১৩ জন পুলিশকর্মী চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকার অলঙ্কার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের বাড়ির সামনে যান। কিন্তু ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা পুলিশ যাওয়ার খবর পেয়ে পালাতে শুরু করে বলে দাবি। সেই সময় দুষ্কৃতীরা গ্রেফতারি এড়াতে ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিশের গাড়িকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়লে পুলিশকর্মীরা ভয়ে পিছু হটেন বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাওয়ার পরে লোক দেখাতে কয়েকজন পুলিশকর্মী দুষ্কৃতীদের তাড়া করার অভিনয় করে অন্ধকারে গুলি চালায়। দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যাওয়ার প্রায় আধঘন্টা পরে রায়গঞ্জ থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ডাকাতির খবর পেয়েও ওইদিন প্রথমে কেন বড় পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকা থেকে বার হওয়ার রাস্তা ঘিরে ফেললো না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। ডাকাতদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও বোমা থাকতে পারে, তা পুলিশের কাছে অজানা নয়। সে ক্ষেত্রে, পুলিশ কেনও আগাম দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে ঘটনাস্থলে গেল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ইটাহারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্যও পুলিশের ভূমিকায় বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে বেশি সংখ্যক পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছে সক্রিয়তা দেখালে দুষ্কৃতীরা পালাতে পারত না। ঘটনার দেড়দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে না পারাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাসিন্দারা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।’’

রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোমের অভিযোগ, কিছুদিন আগে একই কায়দায় ইটাহারের দুর্গাপুর এলাকায় এক অলঙ্কার ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি করে পালায় পুলিশ। ইটাহারের সার্কেল ইন্সপেক্টর অফিস থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ওই জাকাতির ঘটনাটি ঘটলেও খবর পেয়েও লুঠপাট চলাকালীন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। কয়েকমাস আগে হেমতাবাদ ও চাকুলিয়ায় পর পর একাধিক দোকানে চুরির ঘটনা ঘটলেও আসল দুষ্কৃতীরা এখনও গ্রেফতার হয়নি বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE