ভাসছে মরা মাছ।-নিজস্ব চিত্র।
ফুলবাড়ি ব্যারাজ লাগোয়া জলাশয়ে মরা মাছ ভেসে উঠছে। সোমবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবীর নজরে পড়ে বিষয়টি। তাঁরা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন। অভিযোগ, ব্যারাজের ধারে ওই জলাশয়ে পানিফল চাষ করা হয়। যারা ওই চাযে যুক্ত তারাই কিটনাশক ছড়িয়েছেন জলে। সে কারণেই মাছ মরছে। কাছেই শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল সরবরাহের জল তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। কিটনাশকে দূষিত জল বর্ষায় সেখানে মিশতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনা জানার পর শিলিগুড়ি পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের তরফে খোঁজ খবর শুরু করেছে। ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের তরফে ভক্তিনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মহানন্দা ব্যারাজ ডিভিশন-১-এর সাব ডিভিশনাল অফিসার বিপ্লব দাস বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও ব্যারাজ লাগোয়া জলা জমিতে ধান চাষের ক্ষেত্রে একই ভাবে কিটনাশক দেওয়া নিয়েও সমস্যা হয়। সে বারও মাছ মরেছিল। বিষয়টি নজরে আসার পর পুলিশে অভিযোগও করা হয়েছিল। ব্যারাজে পশ্চিম দিকে ওই অংশ ফাঁসিদেওয়া থানার অন্তর্ভুক্ত। সে জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘এদিন ঘটনাটি ঘটেছে উল্টোদিকে। জলা জায়গায় যারা পানিফল চাষ করছে তারাই কিটনাশক মেশাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে। সেই মতো পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কাছেই পুরসভার পানীয় জল তোলার জায়গা। সে কারণে বিষয়টি উদ্বেগের।’’
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছেন। ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্টমেন্ট প্ল্যান্টে জল পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি আমাদের জল তোলার জায়গা থেকে কিছু ‘ডাউন স্ট্রিম’-এ। তবে বিষয়টি শোনার পরেই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জল সরবরাহের আগে পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে।’’ ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গেও পুর কর্তৃপক্ষ কথা বলছেন। স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, এলাকার কিছু লোক বহিরাগতদের নিয়ে ব্যারাজ লাগোয়া ওই সমস্ত জলা জায়গায় চাষ করছে। পানিফল চাষের ক্ষেত্রে পোকায় যাতে গাছ নষ্ট না করে সে জন্য তারা কিটনাশক ছড়িয়েছেন। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কয়েক জন বলেন, ‘‘আমরা রাতে জাল পেতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রচুর মরা মাছ আটকেছে। কীটনাশকের জেরে জল থেকে তোলার পর মাছগুলি দ্রুত পচতে শুরু করে।’’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড ফাউন্ডেশন। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানান, ওই জায়গা সরকারি এক্তিয়ারের মধ্যে। সেটি এ ভাবে কেন দখল হচ্ছে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ব্যারেজ লাগোয়া ওই জলা জমিতে চাষ আবাদ, সেখানে কিটনাশক মেশান বিপজ্জনক, বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকায় মাছ-সহ অন্যান্য জলজপ্রাণী রয়েছে। পরিযায়ী পাখিরা আসে। কীটনাশকের প্রভাবে প্রণীগুলি বিপন্ন হতে পারে। এখনই সমস্ত স্তর থেকে এই প্রবণতা রোখার চেষ্টা করতে হবে। পুরসভার তরফে শহরে সরবরাহের জন্য পানীয় জল ওই এলাকা থেকে তোলা হচ্ছে। সে কারণে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’ ব্যারাজের কয়েকজন কর্মী জানান, তাঁরাও বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন। তাঁরা নিষেধ করলে উল্টে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে কড়া ব্যবস্থা না নিলে এ ভাবে জলাজমি দখল করে চাষের প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy