Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘরের ছেলে কাশ্মীরে, তিন দিন খোঁজ নেই 

সেই ব্লকের একটি গ্রাম ঘরধাপ্পা। গ্রামে যেতে হয় মেঠোপথ ধরে। কারও বাড়ি বেড়ার। কারও টিনের চালার।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: রয়টার্স।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: রয়টার্স।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৫:৫২
Share: Save:

সামনেই ইদ। কিন্তু খুশির বদলে উদ্বেগে উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার ঘরধাপ্পা গ্রাম।

গত তিন দিন ধরেই ফোনে কথা বলা যায়নি কাশ্মীরে কর্মরত এখানকার শ্রমিকদের। তাঁরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তা কেউ জানেন না। সেই উদ্বেগই ভেসে বেড়াচ্ছে এই গ্রামের বেশ কয়েকটি ঘরে। এই গ্রামের ১২ জন যুবক কাশ্মীরে আপেল বাগানে কাজ করেন। শেষ রবিবার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে পড়েছে ঘরধাপ্পার শ্রমিক পরিবারগুলো। জেলার মধ্যে শিক্ষা এবং আর্থিক দিক পিছিয়ে পড়া গোয়ালপোখর ২ ব্লক।

সেই ব্লকের একটি গ্রাম ঘরধাপ্পা। গ্রামে যেতে হয় মেঠোপথ ধরে। কারও বাড়ি বেড়ার। কারও টিনের চালার। ঘরের কাছে কাজকর্ম নেই। গ্রামের বেশিরভাগ যুবক ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। এই গ্রামের ১২ জন যুবক কাশ্মীরে একটি আপেল বাগানে কাজ করেন। তাঁরা হলেন সমসের আলি, সামিম আখতার, আবুল কাশিম, মহম্মদ নাদিম, মহম্মদ জাফর, ফিরোজ আলম, মেহেবুব আলম, জামিল আখতার, নাজিবুল হক ও মহম্মদ মোজাম্মেল এবং জাকির হোসেন ও মিনহাজুল হক। পরিবারের সঙ্গে রবিবার শেষ কথা হওয়ার পর গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায় দীর্ঘশ্বাসে গোটা গ্রামের বাতাস ভারী। গ্রামবাসীরা জানেন না কাশ্মীরে কী হয়েছে। এই গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশিম। কাশ্মীরের কুলঘামে একটি আপেল বাগানে কাজ করেন। কাশিমের পরিবারে মা ও স্ত্রী রয়েছেন। দুই ছেলে রয়েছেন। বাড়িতে নিত্য অভাব। তাই সমসের, জামিলদের সঙ্গে তিনিও বাড়তি রোজগারের আশায় কাশ্মীরে পাড়ি দেন। প্রতি বছর ইদের আগে বাড়ি ফেরেন। বাড়ির সবার জন্য সাধ্য মতো নতুন জামাকাপড় আনেন। বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেশ আনন্দে কাটে দিনটি। কিন্ত এবার কোথাও হাসি নেই মুখে। চোখ মুখে উদ্বেগ। কখনও শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে চোখের জল মুছছেন কাশিমের স্ত্রী বিবি নাদিরা। এদিন তিনি জানালেন, বছরের বেশিরভাগ সময় কাজের সূত্রে সেখানে থাকলেও ইদের আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। কিছুদিন আগেও ফোনেও বলেছিল ইদের আসার কথা ছিল তার। মেহেবুব আলম কাশ্মীরে আপেল বাগানে কাজ করেন। মেহেবুবের বাবা গোলাব আলি বললেন, ‘‘শনিবার কথা হয়েছিল। ফোনে বলছিল এখানে হঠাৎ কারফিউ জারি হয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছি না। বলছিল, আমরা বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবো। কিন্ত তারপর আর ছেলেকে ফোনে যোগাযোগ করে পাচ্ছি না।’’ তারপর থেকে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। কোথায় আছে কবে ফিরবে,বুঝতে পারছিনা। দুশ্চিন্তায় জাকির হোসেনের বাবা মহম্মদ সোলেমানও । তিনি বলেন, ‘‘ইদে বাড়ির আসার কথা। ফোনেও পাচ্ছি না। জানি না ছেলে আমার কী অবস্থায় আছে।’’ তেমনই নাদিমুল,নাজিবুলদের ঘরেও উৎকন্ঠায় কাটছেন। ইসলামপুর শ্রম দফতরের আধিকারিক সেখ নৌসাদ আলি বলেন কাশ্মীরে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE