Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মৃত বৃদ্ধের পঞ্চাশ হাজার টাকা ফেরালেন শহরের অটোচালক

বাইক দুর্ঘটনায় জখম বৃদ্ধকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এক অটোচালক এবং তিন পথচারী তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে গিয়েছিলেন। জখম বৃদ্ধর শরীরের কাছে রাস্তায় পড়েছিল অনেকগুলি টাকা, কিছু খুচরো পয়সা। সেগুলি হিসেব করে তুলে রেখেছিলেন ওই অটোচালক কার্তিক সরকার।

মৃত প্রাণহরি বর্মনের পরিবারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন হাসপাতালের সুপার। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত প্রাণহরি বর্মনের পরিবারের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন হাসপাতালের সুপার। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

বাইক দুর্ঘটনায় জখম বৃদ্ধকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এক অটোচালক এবং তিন পথচারী তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে গিয়েছিলেন। জখম বৃদ্ধর শরীরের কাছে রাস্তায় পড়েছিল অনেকগুলি টাকা, কিছু খুচরো পয়সা। সেগুলি হিসেব করে তুলে রেখেছিলেন ওই অটোচালক কার্তিক সরকার। বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে টাকা খুচরো গুনে ৫০ হাজার ৩৪৩ টাকা হাসপাতাল সুপারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। জখম বৃদ্ধকে বাঁচানো যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার তাঁর পরিবারের হাতে অটোচালকের উদ্ধার করা ওই টাকা তুলে দেন হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম প্রাণহরি বর্মন (৭৫)। মৃত প্রাণহরিবাবুর বাড়ি সিতাইতে। বুধবার দুর্ঘটনার পর তাঁকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়েছিলেন অটো চালক এবং অন্যরা। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি মারা যান। তখনও পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ পরিবারের লোকেরা খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলবাড়িতে পূর্বধনতলাতে তাঁর ছেলে মণি বর্মন থাকেন। মণিবাবুর মেয়ে সন্তানসম্ভবা বলে বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। নাতনির সেই অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে একাই আসছিলেন প্রাণহরিবাবু। বেলা ১০টা নাগাদ সিতাই থেকে ফুলবাড়িতে পৌঁছন। বাস থেকে নামার পর একটি বাইক তাঁকে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। ছিটকে পড়েন প্রাণহরিবাবু। বাইকটিকে পুলিশ আটকও করেছে। অভিযুক্তকে অবশ্য এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

রাত হচ্ছে অথচ প্রাণহরিবাবু পৌঁছননি দেখে মণিবাবুর ছেলে প্রসেনজিৎ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে খোঁজ করছিলেন। তখন জানতে পারেন এক বৃদ্ধ বাস থেকে নামার পর একটি বাইক তাঁকে ধাক্কা মেরেছে। তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার আরও কয়েক জনের কাছ থেকে ঘটনা শুনে তাঁরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান। প্রাণহরিবাবুর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই বাড়িতে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। শোকের ছায়া নেমে আসে আত্মীয়দের মধ্যে। এ দিন ভোরে সিতাই থেকে শিলিগুড়িতে আসেন প্রাণহরিবাবুর স্ত্রী কুসুমদেবী। ময়নাতদন্তের পর বিকেলে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছে।

পরিবারের সদস্যকে হারানোর বেদনার মধ্যেও কার্তিকবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালের সুপারকে তাঁরা বলে এসেছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে কখনও দেখা হলে খবর দেবেন। আমাদের তরফে ওঁকে ধন্যবাদ জানাবেন।’’ কার্তিকবাবু কোনও যোগাযোগের নম্বর রেখে যাননি। সুপার একটি ছবি তুলে রেখেছিলেন। সেই ছবিটিই পরিবারের সদস্যদের দেখালেন। পঞ্চাশোর্ধ কার্তিকবাবু ওই টাকা সুপারের হাতে তুলে দিয়ে জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনার কথা। আবেদন করেছিলেন বৃদ্ধ সুস্থ হলে বা পরিবারের লোকেরা এলে তাদের হাতে যেন টাকাটা তুলে দেওয়া হয়। এ দিন পুলিশের উপস্থিতিতে হাসপাতাল সুপার প্রাণহরিবাবুর স্ত্রী, ছেলে এবং পরিবারের সদস্যদের হাতে ওই টাকা তাঁদের হাতে তুলে দেন। হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘অটো চালক কার্তিকবাবু ওই টাকা পয়সা গুনে দিয়ে যান। প্রাণহরিবাবু জখম হয়ে লুটিয়ে পড়ার পর তাঁর ওই টাকা রাস্তার উপর পড়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। সৎ মানুষ কার্তিকবাবুর দেওয়া ওই টাকা পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto driver Rupees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE