Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাল্য বিবাহ রুখতে শপথ

আইন রক্ষার দায়িত্ব এ বার নিজেদের কাঁধেই তুলে নিলেন ওঁরা। চার হাত এক করাই যাঁদের কাজ, এ বার তাঁরাই হাত মিলিয়ে শপথ করলেন বয়স আঠারোর কম হলে বিয়ে দেবেন না সে মেয়ের।

বিয়ে দেন যাঁরা, তাঁরাই শপথ বাক্য পাঠ করলেন বাল্য বিবাহ রোখার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

বিয়ে দেন যাঁরা, তাঁরাই শপথ বাক্য পাঠ করলেন বাল্য বিবাহ রোখার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

আইন রক্ষার দায়িত্ব এ বার নিজেদের কাঁধেই তুলে নিলেন ওঁরা। চার হাত এক করাই যাঁদের কাজ, এ বার তাঁরাই হাত মিলিয়ে শপথ করলেন বয়স আঠারোর কম হলে বিয়ে দেবেন না সে মেয়ের।

রবিবার ফালাকাটার পুরোহিত, ইমাম, ফাদারদের সঙ্গে এক সুরে গলা মেলালেন কয়েকশো বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ব্যবস্থাপনায়, ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগিতায় স্থানীয় তরুণ সঙ্ঘের মাঠে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের না দেওয়ার ওই শপথ বাক্য পাঠের অনুষ্ঠান হয়।

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, থানার আইসি, পঞ্চায়েত প্রধান, এসএসবির আধিকারিকদের সামনে তাঁরা শপথ নেন, এখন থেকে কোনও মেয়ের জন্ম শংসাপত্র না দেখে আর বিয়ে দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, এ দিন সবাই শিশু-নারী পাচার ও শিশু শ্রম চোখে পড়লেই পুলিশকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করবেন বলেও শপথ নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা সকলেই স্বেচ্ছাসেবীর সংস্থার এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আইনি বা প্রশাসনিক সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। বিধায়ক অনিল অধিকারী ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সন্ধ্যা বিশ্বাস বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠান জনগণকেও সচেতন করবে। বাল্যবিবাহ আটকানোও সহজ হবে। শুধু আইন দিয়ে এই প্রবণতা রোখা সম্ভব নয়।’’

দেওমালির জামা মসজিদের ইমাম জামসেদ আলি, সরুগাঁও এনইএলসি চার্চের ফাদার রেভারেন্ড ফচু হাঁসদা, পণ্ডিত রজনী ঝা বা পুরোহিত হৃদয় চক্রবর্তীরা বলেন, “১৮ বছর না হলে মেয়েদের বিয়ে আমরা করাব না।”

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত রায় বলেন, “অনেক পরিবারেই বাবা-মায়েদের অনুরোধ করলেও কাজ হতো না। তাই যাঁদের সাহায্য নিয়ে বিয়ে দিতে হয়, প্রসাশনের সহযোগিতায় তাঁদের দিয়েই শপথ নেওয়ালাম। তবে এই কর্মকাণ্ড রুখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।” কিছু দিন আগেই এলাকার বাসিন্দা দলুশ লাকরা নবম শ্রেণির ছাত্রী মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে এসে তিনি নিজের ভুল কবুল করেন। বলেন, “অল্প টাকা পয়সা ছিল। ভাল ছেলে পাওয়ায় বিয়ে দিয়ে দিলাম। ভেবেছিলাম, বেশি বয়স হলে মেয়ের চেহারাও হয়তো খারাপ হয়ে যাবে।” আশা করা যায় সেই বেআইনি বিয়ে এবং মনের গভীরের অসচেতনতা বানচাল করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন উদ্যোক্তারা।

আবার উল্টো কথাও এলাকার শিশিরকুমার রায় শোনালেন, তাঁর মেয়ের বয়স ২২ পেরিয়েছে। পড়াশোনা করছে, নাচ-গান শিখছে সে। মেয়ের সম্মতি নিয়েই বিয়ে দিতে চান তিনি। নরসিংহপুর এলাকার বাসিন্দা কালিদাস বর্মন অনুষ্ঠানে এসে বলেন, ‘‘আমার চার মেয়ে। এক সাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। যত অসুবিধাই হোক মেয়েরা সাবালিকা হলেই বিয়ের কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Community Early marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE