বিয়ের অনুষ্ঠানে বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
বিয়ের আসর তখন জমজমাট পানিশালার হাটে। পুরোহিতের গম্ভীর মন্ত্রোচ্চারণ, সঙ্গে সানাইয়ের সুর। ছাঁদনাতলা ঘিরে কয়েকশো নিমন্ত্রিতের উচ্ছ্বাস। এইসব যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল বিয়ের সাজে বর-কনেকেও! বাদলের বাতাসে ছন্দে দুলছিল তো ওদের শরীরও!
ওরা তো বট আর পাকুড়! বট কনে, পাকুড় বর! বুধবার, ২২ শ্রাবণ ওদেরই বিয়ে হল রায়গঞ্জের শীতগ্রামের পানিশালায়। বর আর কনেপক্ষ আশপাশের গ্রামের দু’হাজার মানুষ। মেতে উঠলেন হিন্দু-মুসলিম— দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারাই। বিয়ে ঘিরে হল নাচ-গান। এমনকী, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বিয়ের সাতকাহন লিখলেন কেউ কেউ। স্থানীয় গ্রামীণ মানুষের বিশ্বাস, বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে এলাকার কল্যাণ হয়, বাসিন্দাদের সম্পদলাভ হয়। এই বিশ্বাস অনেকদিনের।
এই বিয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা নিবারণ দাস, মনোরঞ্জন দাস, ভাদ্রু বর্মনরা জানান, এলাকায় পাশাপাশি একটা বট এবং পাকুড় গাছ ছিল। ২০১০ সালে ঝড়ে উপড়ে যাওয়ায় গাছ দু’টিকে বাঁচানো যায়নি। তবে কিছুটা দূরে একই সঙ্গে বট এবং পাকুড়় গাছের দুটো চারা মেলে। ভাদ্রু এবং কয়েকজন সেই চারা দু’টি তুলে উপড়ে যাওয়া গাছ দু’টোর জায়গায় লাগান। সেই গাছ দু’টিই এখন বড় হয়েছে। এর পর পঞ্জিকা দেখে ২২ শ্রাবণ, অর্থাৎ ৮ অগস্ট বিয়ের দিন ঠিক হয় ওদের।
বাসিন্দাদের অনেকে চাল-ডাল, টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। শাড়ি-ধুতি কিনে বিয়ের বাজার হয়েছে। বিয়েতে নিমন্ত্রণ করতে শীতগ্রাম এবং লাগোয়া পানিশালা, দুহাবাড়ি, ধুয়াবিষুয়া, পোকম্বা গ্রামে মাইকিং করে বাসিন্দাদের আসতে বলা হয়। উদ্যোক্তারা তাদের চেনাপরিচিতদেরও আসতে বলেছিলেন। পাত পেড়ে খেয়েছেন সকলেই। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, মুগের ডাল, তরকারি, পাঁপড়। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিবারণ বলেন, ‘‘বট-পাকুড়ের বিয়ে প্রথা ছোট থেকেই শুনে আসছি। সেই ভাবনা থেকেই আয়োজন করা হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy