তখন উনিশ শতকের শেষ ভাগ। ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্ম হচ্ছে এক নতুন শহরের। অন্য প্রান্তে পশ্চিম ইউরোপের আরেকটি শহরের পুর্নগঠন কাজ চলছে পুরোদমে। ‘নব্য’ ইতালির নতুন রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছে ওই শহরকে। একই সময়ে পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই শহরের গঠন এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু হওয়া নিছকই ঘটনাচক্র। তবে সেই বৃত্ত সম্পন্ন হতে চলেছে দেড়শো বছর পরে। সম্প্রতি হেরিটেজ কমিশন শহর পরিদর্শন করে প্রস্তাব দিয়েছেন জলপাইগুড়ি শহরের পরিকাঠামো সাজা হোক রোমের স্থাপত্যের আদলে। দুই শহরের পুরোনো ভবন, নদীর বয়ে যাওয়া সবেতেই নাকি কিছু সাযুজ্য রয়েছে। প্রস্তাব লুফে নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু করেছে জলপাইগুড়ি পুরসভা।
দুই শহরের দূরত্ব ৬৯৭৯ কিলোমিটার। গুরুত্ব, জনবসতি এবং আধুনিক সুযোগসুবিধে কোনও দিক থেকেই দুই শহরের কোনও তুলনাই হয় না। তবে ইতিহাস বলছে ১৮৬৯ সালে জলপাইগুড়ি জেলা গঠিত হল। জেলা সদর পরিচালনার জন্য পত্তন হল জলপাইগুড়ি নামে নতুন শহরের। ইংরেজ প্রশাসকরা জলপাইগুড়ি পুরসভাও তৈরি করেন সেই সময়ে। শুরু হয় নতুন শহর গঠনের কাজ। কাছাকাছি ১৮৭০ সালে রোমকেও ইতালির নতুন রাজধানী ঘোষণা করা হয়।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক অম্লানজ্যোতি সাহা বলেন, ‘‘এই সুযোগ জলপাইগুড়ির কাছে নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি। হেরিটেজ কায়দায় শহরকে সাজানো গেলে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। শহরের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। উত্তরবঙ্গে যে নয়া ট্যুরিজম সার্কিট তৈরি হচ্ছে তাতেও ঢুকে যাবে এই শহর।’’ স্থির হয়েছে, শহরের নদীর দু’পাড় দিয়ে তৈরি হবে পার্ক, হাঁটার করিডর। পার্ক করিডরের আলো থেকে বসার বেঞ্চ সব তৈরি হবে রোমান স্থাপত্যে। শহরের পথবাতির স্তম্ভগুলি বদলে যাবে নানা রোমান মূর্তির থিমে। নদীতে বোটিং হবে, শহরে রোপওয়ে চলানোর পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত। রাস্তার রেলিং, ডিভাইডার সবেতেই থাকবে হেরিটেজ আদল। সেই আদল হবে রোমের শিল্পকলার থিমে। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, ‘‘কী ভাবে রোম-কে থিম করে শহরের সৌন্দর্যায়ন কী করে করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ছি আমরা। দ্রুত কাজ শুরু করে দিতে চাই। শীঘ্রই এক নতুন জলপাইগুড়ি উপহার পাবে বাসিন্দারা।’’
ইতিহাস নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সিদ্ধার্থ গঙ্গোপাধ্যায়। সিদ্ধার্থের কথায়, ‘‘এই শহরের একটা শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে। আভিজাত্য এবং সংস্কৃতি শহরের শিরা-উপশিরায়। রোমের থিমে শহর সাজলে তার একটা দৃশ্যগত স্বীকৃতিও মিলবে।’’
জলপাইগুড়ির এক পাশ ছুঁয়ে বইছে তিস্তা নদী, রোম শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে যে নদী তার নাম টিবের। সেই নদীর ছায়া কিভাবে এবং কতটা তিস্তার চরে পড়ে সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy