Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বন‌্ধে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীদের লোকসান ৪০ কোটি

সাধারণ ধর্মঘটে বাস, গাড়ি চললেও ব্যবসায় তার প্রভাব এড়ানো যায়নি। এমনটাই জানালেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা। তুলনা টানতে গিয়ে তাঁদের কেউ কেউ উদাহরণ দিলেন দু’বছর আগে নোটবন্দির স্মৃতির।

 রুদ্ধ: গাড়ি আটকানোর চেষ্টা ধর্মঘটীদের। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রুদ্ধ: গাড়ি আটকানোর চেষ্টা ধর্মঘটীদের। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৯
Share: Save:

সাধারণ ধর্মঘটে বাস, গাড়ি চললেও ব্যবসায় তার প্রভাব এড়ানো যায়নি। এমনটাই জানালেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরা। তুলনা টানতে গিয়ে তাঁদের কেউ কেউ উদাহরণ দিলেন দু’বছর আগে নোটবন্দির স্মৃতির। উত্তরবঙ্গের ব্যবসার কেন্দ্র বলে পরিচিত শিলিগুড়ি শহর। সেখানকার ছোট থেকে মাঝারি কিংবা বড় ব্যবসায়ীদের হিসাবে, গত দুই দিনে শিলিগুড়িতে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৪০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কর্তারা জানাচ্ছেন, সরকারি অফিস, দফতর থেকে কিছু দোকানপাট খোলা ছিলই ঠিকই। কিন্তু বন্ধ ছিল ব্যাঙ্ক, ডাকঘর,এটিএম পরিষেবাও। তাই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেনের চেক, ড্রাফ্টের ব্যবহার করা যায়নি। নগদ টাকার অভাবে মুদির দোকান থেকে আড়তদারদের একেবারেই কেনাবেচা হয়নি। ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘শ্রমিক স্বার্থের কথা বলে বন্‌ধ, ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। দোকানপাট, বাজার, আড়ত খোলা না থাকায় তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। এই হিসাব ধরলে ক্ষতির অঙ্ক দুইদিনে ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’’

উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন ফোসিনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘নোটবন্দির সময় প্রথম কয়েকদিনে এমনই ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীদের। অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’

গত দুই দশকে ধীরে ধীরে শিলিগুড়ি শহর বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। ছোট থেকে মাঝারি, মহকুমা জুড়ে কমবেশি ১ লক্ষ ব্যবসায়ী আছেন। এর বাইরে নয়াবাজার, চম্পসারি পাইকারি বাজারে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী আছেন। খালপাড়ার নয়াবাজার উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসাবে স্বীকৃত। দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মত বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক শিলিগুড়ি পৌঁছয়। পাইকার, আড়তদারদের মাধ্যমে গোটা উত্তরবঙ্গে, সিকিম, দার্জিলি-কালিম্পং পাহাড়, নেপালে জিনিস সরবরাহ হয়ে থাকে। এই বিরাট বাজারের কিছু কিছু দোকানপাট দু’দিনে খোলা থাকলেও ব্যবসা পুরোপুরি মার খেয়েছে। নয়বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, নোটবন্দিতে নগদ টাকার আকাল হয়েছিল। নগদ টাকা বাজারে কম থাকলেও ব্যবসা মারা খায়। এ বারও তা হল। নর্থবেঙ্গল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রেয়াল বলেন, ‘‘়ক্ষতি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। শ্রমিক, মালিকেরা অনেক জায়গায় খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু গাড়িঘোরা চলাচল না করায় সমস্যা হয়।’’

শহর লাগোয়া বিভিন্ন শিল্পনগরীতেও ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। কোথাও কারখানা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আবার কাজও হয়েছে বহু জায়গায়। কারখানার মালিকদের কথায়, ‘‘উৎপাদন চলেছে। কিন্তু কেনাবেচা সেভাবে করা যায়নি। মাল গুদামে রয়েছে।’’

নর্থবঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজের অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘উৎপাদিত মালপত্র থেকে গুদামে দু’দিনে জমে গিয়েছে। গাড়ি চলেনি, নগদ টাকা কম ছিল, তাই কেনাবেচা হয়নি। কিন্তু বহু কারখানায় কাজ হয়েছে, এটাই এ বার বড় বিষয়।’’

কারখানার মত ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন প্রায় স্বাভাবিক ছিল শিলিগুড়ি। বাস, ছোট গাড়ি, অটো, টোটো চলেছে। স্কুল এবং রাজ্য সরকারের সব অফিস খোলা ছিল। বামেরা সকালে মিছিল করে দোকানপাট বন্ধ করলেও পরে তা ফের খুলে যায়। সন্ধ্যায় আরেক দফায় বামেরা মিছিল করে। কিন্তু ততক্ষণে দোকানপাট খুলে, ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হয়ে জমজমাট হয়ে গিয়েছিল শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Strike Bharat Bandh Bandh Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE