Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হারের পর্যালোচনা বৈঠকেও গোলমাল

পুরভোটের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে কে সামনের সারিতে বসবেন তা নিয়ে গোলমালের সময়ে জেলার একজন সম্পাদক গণেশ দেবনাথকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার শিলিগুড়ির মহানন্দাপাড়ার চার্চ রোডের একটি ভবনের সভাকক্ষে দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সামনেই চলল মারধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

পুরভোটের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে কে সামনের সারিতে বসবেন তা নিয়ে গোলমালের সময়ে জেলার একজন সম্পাদক গণেশ দেবনাথকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার শিলিগুড়ির মহানন্দাপাড়ার চার্চ রোডের একটি ভবনের সভাকক্ষে দার্জিলিংয়ের সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সামনেই চলল মারধর। পরে তাঁর হস্তক্ষেপেই ঘটনা আয়ত্বে আসে। যদিও মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন সাংসদ। তবে যাঁকে মারা হয়েছে, সেই সম্পাদক অবশ্য অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। এদিন বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ ওয়ার্ডের বিজিত প্রার্থীরা দলের মধ্যেকার শত্রুর জন্যই হারতে হয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিও উঠেছে। এদিন রাজ্য সম্পাদক থেকে শুরু করে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপির সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। পরে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেও ক্ষোভ মেটেনি অনেকেরই বলে দলীয় সূত্রের খবর। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী, দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু সহ জেলা নেতৃত্বরা।

সাংসদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘কর্মীদের যা বক্তব্য ছিল তা শোনা হয়েছে। তবে কোনও মারধর বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি।’’

এদিন বৈঠক ডাকা হয়েছিল সকাল ১১ টায়। উদ্দেশ্য ছিল পুরভোটের হারজিতের কারণ অনুসন্ধান করা ও তার ভিত্তিতে পরবর্তী শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ ও আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি। সাংসদ, বৈঠকে যেতে এক ঘ্ন্টা দেরি করেন। তার মাঝেই কারা সামনের সারিতে বসবে তা নিয়ে বচসা বাঁধে গণেশবাবুর সঙ্গে পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থকদের। মুহূর্তের মধ্যেই উত্তেজিত কর্মীরা গণেশবাবুর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁকে এলোপাথারি চড়-ঘুষি মারেন একাধিক কর্মী। সেই মুহূর্তেই বৈঠকে প্রবেশ করেন অহলুওয়ালিয়া। তিনি দেখেন, তাঁর দলের জেলার অন্যতম সম্পাদক দলেরই একাংশ কর্মীর হাতে মার খাচ্ছেন। ক্ষুব্ধ সাংসদের নির্দেশে দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য হয়। তবে তাঁদের নিরস্ত করা হলেও ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কর্মীরা বাইরে বেড়িয়েও গালিগালাজ করতে থাকেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দলের প্রার্থীদের জিতিয়েছেন। তাই তাঁরাই সামনের সারিতে বসবেন। এক কর্মী সংবাদমাধ্যমকে ছবি তুলতে দেখে তাঁদের উপরেও চড়াও হয়ে ছবি মুছে ফেলার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। বিক্ষুব্ধদের মধ্যে একজন বলেন, ‘‘দলীয় জেলা নেতৃত্ব চক্রান্ত করে আমাদের পিছনের সারিতে বসানোর চেষ্টা করছিলেন। তা আমরা মেনে নেব না।’’ অপর এক বিক্ষুব্ধ কর্মীর অভিযোগ, ‘‘জেলা নেতৃত্বদের মধ্যে যাঁরা এখন নাম কেনার চেষ্টা করছেন, ভোটের আগে তাঁদের কোনও সদর্থক ভূমিকা ছিল না। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে হারের জন্য তাঁরা দায়ী। এখন আমাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তা মেনে নেওয়া কঠিন।’’ যদিও গণেশবাবু জানান, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মুখ খুলবেন না। তিনি বলেন, ‘‘একটা পরিবারের মধ্যে গোলমাল হতেই পারে। তবে আপাতত কোনও সমস্যা নেই। সমস্ত মিটে গিয়েছে।’’

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের মঞ্চে সাংসদ সহ রাজ্য ও জেলা নেতাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁর সামনের দুটি সারিতে পুরভোটে লড়া প্রার্থীদের এবং তার পরে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। তার পিছনে বাকি কর্মীদের আসন বরাদ্দ হয়। ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কর্মীরা প্রথমের সারির আসন দখল করে বসেছিলেন। গণেশবাবু তাঁদের পিছনের সারিতে যেতে বলেন। তাতেই এই বিপত্তি।

তবে সামান্য কারণে এই বচসা আসলে জেলা নেতৃত্বের প্রতি জমে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন দলের একাংশ। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যখন প্রার্থীদের বক্তব্য পেশ করতে বলা হয়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেরল প্রার্থী দীপঙ্কর অরোরা, নিজের দলের মধ্যে অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করা কর্মীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি তোলেন। দলের জেলা নেতৃত্ব প্রচারে সাহায্য করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রাজু সাহা। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ভাল ফল করতে হলে ‘ইমেজ বিল্ডিং’-এর উপরে জোর দিয়ে পুরবোর্ড গঠনে দর্শকাসনে বসার পরামর্শ দেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজিত প্রার্থী সবিতা অগ্রবাল। পরে বৈঠকের শেষে সাংসদও জানিয়ে দেন, তাঁরা বোর্ডে কাউকে সমর্থন করবেন না। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আমাদের দুই কাউন্সিলরের ভূমিকা কী হবে তা পরে ঠিক করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE