Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্পর্শ আর অনুমানই ভরসা, রাখি বনাচ্ছে ওরা

স্পর্শ আর অনুমান— ভরসা এই দুটোই৷ তাতে ভর করেই হাত চলছে কাঁচিতে-সুতোয়। নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে রাখি, পূর্ণিমার দিন যা হাসি ফোটাবে ভাইবোনেদের মুখে।

মগ্ন: দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের রাখি তৈরি। আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে

মগ্ন: দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের রাখি তৈরি। আলিপুরদুয়ারে। ছবি: নারায়ণ দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০৮:৫০
Share: Save:

স্পর্শ আর অনুমান— ভরসা এই দুটোই৷ তাতে ভর করেই হাত চলছে কাঁচিতে-সুতোয়। নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে রাখি, পূর্ণিমার দিন যা হাসি ফোটাবে ভাইবোনেদের মুখে।

আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন একটি সুবোধ সেন স্মৃতি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে রাখিপুর্ণিমার দিন স্কুলে আসা অতিথিদের জন্য রাখি তৈরিতে ব্যস্ত দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। প্রথম বার বিদ্যালয়ে রাখি তৈরির উদ্যোগ নিয়ে খুশি শিক্ষক শিক্ষকারাও। স্কুল সূত্রে খবর, প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে ৩২ জন পড়ুয়া রয়েছে।

প্রতি বছর বিদ্যালয়ে এসে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা পড়ুয়াদের রাখি পরিয়ে মিষ্টিমুখ করায়। কিন্তু তাদেরকে পাল্টা রাখি পরাতে পারেনা পড়ুয়ারা৷ তাই এ বার স্কুলে আসা অতিথিদেরকেও রাখি পরানোর ভাবনা শুরু হয় স্কুলে৷ প্রধানশিক্ষক আশুতোষ সাহা জানান, সব আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পড়ুয়ারা নিজেরাই রাখি বানাবেন। সেই মত প্রায় এক হাজার টাকার নানা সামগ্রী কিনে রাখি তৈরি শুরু হয়৷ গোটা বিষয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয় গীতা রায় নামে এক শিক্ষিকাকে।

গীতাদেবীর তত্ত্বাবধানেই এখন স্কুলের জনা কুড়ি পড়ুয়া ব্যস্ত রাখি তৈরিতে। কেউ বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সুঁচে সুতো ঢোকাতে ব্যস্ত, কেউ হাতড়ে নানা আঙুলের স্পর্শে খুঁজে নিচ্ছে পুঁতি, চুমকি। সপ্তম শ্রেণির জতরু ওরাঁও, বুদ্ধ ভুইয়াঁ, ষষ্ঠ শ্রেণির বিপ্লব বর্মন, রবি মুন্ডা, পঞ্চম শ্রেণির উত্তম ওরাঁও ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্বজিৎ মুন্ডারা প্রথমবার এই রাখি তৈরি করছে। সেই আনন্দে রীতিমত খুশি। তাদের হাসিতেই যেন রাখিপূর্ণিমার আলো। জতরু, বিপ্লবদের কথায়, ‘‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকরা উৎসাহ দেওয়াতেই আমরা রাখি তৈরি করছি। এ বার রাখিপূর্ণিমার দিন যারা আমাদের স্কুলে আসবেন তাঁদের প্রত্যেককে আমাদের হাতে তৈরি রাখি পরাব।’’ বুদ্ধ, রবিরা আবার বলে ওঠে, ‘‘অন্যান্যবার অন্যরা আমাদেরর হাতে রাখি পরায়৷ তাহলে আমরাই বা সেটা পারব না কেন?’’

শিক্ষিকা গীতাদেবী জানান, আলিপুরদুয়ার বাজার থেকে রাখি তৈরির নানা সামগ্রী-সহ সূচে সুতো পরানোর জন্য বিশেষ যন্ত্রও কেনা হয়েছে। খুব দ্রুত পড়ুয়াদের রাখি তৈরির কৌশল শেখানো হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মাস খানেক ধরে ওরা রাখি তৈরি করছে। প্রায় তিনশো রাখি এ বার তৈরি করা হচ্ছে। এতে স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষক সকলেই খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rakhi Rakshabandhan Blind Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE