Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ বার ক্যামেরা পুলিশের গায়ে

সেই ট্রাফিক পুলিশ কর্মী বলেন, সেদিন এমন একটি জায়গায় চেকিং করা হয়েছে সেখানে ছিল না কোনও সিসিটিভি বা মোবাইলও বের করে ছবিও করা যায়নি।

নজরদার: বুকে লাগানো থাকবে এমন ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র

নজরদার: বুকে লাগানো থাকবে এমন ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৬:৪০
Share: Save:

মাসখানেক আগের কথা। ইংরেজবাজার শহরের ট্রাফিক পুলিশের তরফে বিনা হেলমেটের বাইক চালকদের ধরপাকড় ও কাগজপত্র চেকিং চলছিল শহরেরই বাঁধ রোডে। কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মী সেখানে হেলমেটহীন এক বাইক চালককে আটক করে। কিন্তু জরিমানার কাগজ বের করতেই সেই যুবক ট্রাফিক পুলিশকে ঘিরে রীতিমতো হম্বিতম্বি শুরু করে দেয়।

তাঁর দাদা নাকি পাশের এক জেলার প্রশাসনিক দফতরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, এই বলে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কার্যত হুমকিও দিতে থাকে। ফোন তুলে সেই দাদাকেও বিষয়টি জানায়। কিন্তু সেই ‘দাদা’ না এলেও প্রতিবেশী এক দাদা এসে সেও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে। যদিও নাছোড়বান্দা সেই ট্রাফিক পুলিশ কর্মী জরিমানা করে তবেই বাইক ছাড়েন।

সেই ট্রাফিক পুলিশ কর্মী বলেন, সেদিন এমন একটি জায়গায় চেকিং করা হয়েছে সেখানে ছিল না কোনও সিসিটিভি বা মোবাইলও বের করে ছবিও করা যায়নি। ফলে চুপ করেই হম্বিতম্বি সহ্য করতে হয়েছে। জেলা পুলিশের একটি মহল জানাচ্ছে, বাইক ধরলে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা শহরে আকছা়রই ঘটছে। কখনও কখনও একাধিক ‘দাদা’-দের ফোনও চলে আসছে সেই বাইক ছেড়ে দিতে। এ বার থেকে এমন সব অবাঞ্ছিত ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে রেখে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিতে ইংরেজবাজার শহরের ট্রাফিক পুলিশ অফিসারদের দেওয়া হয়েছে ‘বডি ক্যামেরা’।

তবে শুধু এটাই নয়, একাংশ ট্রাফিক পুলিশও যে ‘ধোওয়া তুলসিপাতা’ নন তাও অভিযোগ অনেক বাসিন্দার। তাঁদের বিরুদ্ধেও বাইক ধরপাকড় ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে সাধু লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। সেই কারবার নিয়ে নজরদারিতেও হাতিয়ার হচ্ছে সেই বডি ক্যামেরা। এ ছাড়া, যে ট্রাফিক পুলিশ অফিসারদের ওই ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে তাঁরা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যখন বাইক নিয়ে টহলদারি করবেন সে সময় কোনও ঘটনা ঘটলে সেই ছবিও ক্যামেরাবন্দি হয়ে যাবে। কোনও ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে যদি দুর্ব্যবহার বা অন্য কোনও অসাধু কারবারের অভিযোগ ওঠে সেটাও ধরা পড়বে সেই ক্যামেরায়।

জেলা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন তিনেক আগে ইংরেজবাজার শহরের তিন জন ট্রাফিক পুলিশ অফিসারকে ওই বডি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরও অফিসার ও কর্মীদের সেই ক্যামেরা দেওয়া হবে। ক্যামেরা গুলি তাঁদের বুকের দিকে জামার মধ্যে সাধারণত লাগানো থাকছে। শুধু নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ দিলেই চালু হয়ে যায় ব্যাটারিচালিত সেই ক্যামেরা এবং ছবির পাশাপাশি কথোপকথন সবই রেকর্ড হয়। ওই ক্যামেরা নাইটভিশন ও কম আলোতেও স্পষ্ট ছবি ওঠে। এখন প্রতিদিনই ওই তিনটি ক্যামেরার যাবতীয় রেকর্ডিং মেমরি কার্ড থেকে নিয়ে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বডি ক্যামেরা থাকা এক ট্রাফিক পুলিশ অফিসার জয়দীপ ঝা বলেন, ‘‘কর্তব্যরত অবস্থায় আমাদের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। এই বডি ক্যামেরা আমাদের রক্ষাকবচের মতো কাজ করছে।’’ মালদহ ওসি ট্রাফিক জয়দীপ দাস বলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের নানা অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিনিয়তই পড়তে হয়। সে ক্ষেত্রে এই বডি ক্যামেরা দারুণ কাজে আসছে এবং আমরা ক্যামেরার সমস্ত রেকর্ডিং খতিয়ে দেখে পদক্ষেপও করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Camera police Police's Uniform
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE