Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রণক্ষেত্র মাঝেরডাবরি, পুলিশকে ঝাঁটা ও ইট

আলিপুরদুয়ার শহরে একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির চেষ্টা করতে গিয়ে কয়েক বছর ধরে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনকে। গত বছর অক্টোবরে এই মাঝেরডাবরি চা বাগানের একটি জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির চেষ্টা করতে গেলেও একই ঘটনা ঘটে।

রুদ্ধশ্বাস: পুলিশ জনতা খণ্ডযুদ্ধ। মাঝেরডাবরিতে। ছবি: নারায়ণ দে

রুদ্ধশ্বাস: পুলিশ জনতা খণ্ডযুদ্ধ। মাঝেরডাবরিতে। ছবি: নারায়ণ দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টের সীমানা পাঁচিল তৈরিকে কেন্দ্র করে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি চা বাগান এলাকা। ওই প্ল্যান্টের বিরোধিতায় বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে এলাকার লোকজনের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।

আলিপুরদুয়ার শহরে একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির চেষ্টা করতে গিয়ে কয়েক বছর ধরে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনকে। গত বছর অক্টোবরে এই মাঝেরডাবরি চা বাগানের একটি জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির চেষ্টা করতে গেলেও একই ঘটনা ঘটে। এরপর বাধা এড়াতেই মাসকয়েক আগে মাঝেরডাবরি চা বাগানের আরেকটি জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বদলে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা নেয় প্রশাসন ও পুরসভা। জমির আশপাশে অনেকটা এলাকা জুড়ে বসতি নেই বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। কিন্তু খোদ প্রশাসন সূত্রেরই খবর, তারপরও দূষণের আশঙ্কায় সেখানে ওই প্ল্যান্ট তৈরি নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। তার মধ্যেই পাঁচিল তৈরির কাজও শুরু হয়ে যায়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, এবার যাতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প নিয়ে কোনওরকম বাধা না আসে তা নিশ্চিত করতে সোমবার পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসকের দফতরে একটি বৈঠক হয়। সেখানে প্রশাসনের তরফে এই প্রকল্প থেকে কোনও দূষণ বা দুর্গন্ধ ছড়াবে না বলে বাসিন্দাদের বোঝানোও হয়। সূত্রের খবর, তাহলে প্রকল্পটি শহরে হচ্ছে না কেন, পাল্টা সেই প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা।

এরপর এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন আন্দোলনকারীরা। যাঁদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি ছিল। অনেকের হাতেই ঝাঁটা ও লাঠি ছিল। প্রকল্পটি যেখানে হচ্ছে, সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প ও শ্রমিকদের একটি ক্যাম্পও ছিল। পুলিশ ক্যাম্পে দুই হোমগার্ড-সহ পাঁচ পুলিশকর্মী ছিলেন। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা পুলিশকর্মী ও শ্রমিকদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।

আধঘণ্টা পর শামুকতলা থানার পুলিশ পৌঁছে আন্দোলনকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। অভিযোগ, এরপর কয়েকজন মহিলাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়। তখনই শুরু হয় ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ। সেইসঙ্গে ইট-পাথরবৃষ্টি। জাতীয় সড়কের দিকে পিছু হটে সেখান থেকেই কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও শ্রমিকদের দুটি ক্যাম্প ছাড়াও জেসিবি মেশিন, মিক্সচার মেশিন, মোটরবাইক ভাঙতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে আলিপুরদুয়ার ও কালচিনি থানার পুলিশ পৌঁছয়। পৌঁছয় র‌্যাফ।

১২টা নাগাদ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ ও র‌্যাফ উত্তেজিত জনতার দিকে এগোতে শুরু করলে ফের পুলিশ লক্ষ করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। সাত পুলিশকর্মী আহত হন। আহত হন শামুকতলা থানার ওসি বিরাজ মুখোপাধ্যায়ও। ফের কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। অভিযোগ, সেই সময় শূন্যে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। এরপরই দু’টি ক্যাম্পের সামনে থেকে জনতা সরে যায়। কিন্তু ততক্ষণে দু’টি তছনছ করে দিয়েছে জনতা।

সাড়ে ১২টা নাগাদ কালকুট সেতুর সামনে জাতীয় সড়কে অবরোধ শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ সেখানে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে তাঁদের হটিয়ে দেয়। এলাকায় টহলের পাশাপাশি বসানো হয় পুলিশ পিকেটও। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘কোনও গুলি চলেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE