Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তুলসী মঞ্চের পাশেই তৈরি তাজিয়া

মহম্মদ মইনুদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের পিলখানায় বরাবরই হিন্দু-মুসলিম এক সঙ্গে মিলে কাজ করি। এটাই রেওয়াজ এখানকার।’’

প্রস্তুতি: পিলখানায়। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: পিলখানায়। নিজস্ব চিত্র

অর্জুন ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫০
Share: Save:

ছোট্ট এক ফালি উঠোন। নিকোনো উঠোনে এক পাশে রয়েছে তুলসী মঞ্চ। অন্য পাশে বেল গাছ। বেল গাছের নীচে শিবলিঙ্গ। রয়েছে কালীর ছবি। আছে ত্রিশূলও। আর ঠিক এখানেই মহরমের তাজিয়া তৈরি করছেন খোকন বিশ্বাস, বাপি বিশ্বাস। রয়েছেন মৌল মহম্মদও। বিশ্বাস বাড়ির উঠোন এখন সম্প্রীতির আঙিনায় পরিণত হয়েছে বলে দাবি জলপাইগুড়ির পিলখানার বাসিন্দাদের।

আজ, মঙ্গলবার মহরম পালিত হবে পিলখানার উপাসনা ক্লাবের মাঠে। সোমবার দুপুরে তাজিয়া তৈরির শেষ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এখানকার বাসিন্দারা। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও হাত লাগিয়েছেন কাজে। লক্ষ্মী বিশ্বাস, শীলা বিশ্বাস, সুনীতা সরকার, রুকবান বেগমেরা এক সঙ্গে তৈরি করছেন তাজিয়া।

মহম্মদ মইনুদ্দিন বলেন, ‘‘আমাদের পিলখানায় বরাবরই হিন্দু-মুসলিম এক সঙ্গে মিলে কাজ করি। এটাই রেওয়াজ এখানকার।’’ মৌল মহম্মদ বলেন, ‘‘মহরম শেষ করেই আমরা সকলে মিলে দুর্গা পুজোয় মেতে উঠব।’’ গ্রামেরই বধূ সুনীতা বলেন, ‘‘প্রতি বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি আমরা। আমার নিজের কীর্তনের দলও রয়েছে। আমরা এখানে সবাই সব ধর্মের মানুষই সবার অনুষ্ঠানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই।’’

বিশ্বাস বাড়ির বধূ লক্ষ্মী বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে তাজিয়া তৈরি হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। তুলসীতলায় প্রতিদিন সন্ধেয় প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আর ওই প্রদীপ দিয়েই তাজিয়ার আরতিও করা হয়।’’ ঠাকুর বরণের কুলো সাজিয়েই নুরিনা খাতুন, মিতা বসু, শোভা কীর্তনিয়ারা তাজিয়া বরণ করেন। তাঁরা জানান, তাজিয়া তৈরির আগে এলাকায় একটি মুসলিম পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানেও তাঁরা এক সঙ্গে রীতি মেনেছেন। এর পর এই তাজিয়া বরণ করে মহরম পালন করা হবে। নুরিনা বলেন, ‘‘আমাদের সবাই সবার ঘরের লোক।’’

উপাসনা ক্লাব জানিয়েছে, কাদোবাড়ি, নামাঞ্জি পাড়া, পাহাড়পুর, বজরাপাড়া, ২ নম্বর গুমটি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাজিয়া নিয়ে হাজির হবেন লাঠি খেলার দলের সদস্যরা। বরাবরই এই মহরম পালন এই ক্লাবটিই পরিচালনা করে বলে জানান স্থানীয় মানুষ। ক্লাবের সদস্য রাজা রায় জানান, দীর্ঘ দিনের রীতি মেনে এ বারেও লাঠি খেলার প্রতিযোগিতা হবে। তিনটি বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও এখানে বসবে মেলা। শহরের বড় পোস্ট অফিস মোড় থেকে পিলখানা পর্যন্ত রঙিন পতাকা দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Muharram Hindu Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE