Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কমিউনিটি হল এখন ‘ভুতবাড়ি’

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কাজ শুরু করার পর দুই দশক পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কমিউনিটি হল চালু হল না বীরপাড়ায়। বাসিন্দারা এখন তাকে চেনেন ‘ভুতবাড়ি’ নামে।

এমনই অবস্থায় পড়ে রয়েছে কমিউনিটি হল। —নিজস্ব চিত্র।

এমনই অবস্থায় পড়ে রয়েছে কমিউনিটি হল। —নিজস্ব চিত্র।

রাজকুমার মোদক
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কাজ শুরু করার পর দুই দশক পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কমিউনিটি হল চালু হল না বীরপাড়ায়। বাসিন্দারা এখন তাকে চেনেন ‘ভুতবাড়ি’ নামে।

একসময় ডুয়ার্সের বীরপাড়ার বাসিন্দাদের আন্দোলনের জেরে কমিউনিটি হলের জন্য ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৯৯৩ সালে ব্যালকনি-সহ ৫০০ আসনের হলের কাজ শুরু হয়। টাকার অভাবে এক বছর নির্মান কাজ বন্ধ থাকার পর, আবার বরাদ্দ হয় আরও ১৬ লক্ষ টাকা। ফের কাজ শুরুর পর ১৯৯৫-৯৬ সাল নাগাদ কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় উদ্বোধনের তোড়জোড়। তার কয়েকমাস আগেই হলের জিনিসপত্র কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। চেয়ার, ফ্যান ও অন্যান্য জিনিস পত্র বাজার দরের চাইতে অন্তত চারগুণ দেখানো হয় বলে অভিযোগ।

নানা মহল থেকে অভিযোগ উঠতেই বন্ধ হয়ে যায় উদ্বোধন। তৎকালীন জলপাইগুড়ি জেলাশাসক পি রমেশকুমার তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পর দুই দশক কেটে গেলেও, তার পরে কী হল তা জানেন না বীরপাড়ার বাসিন্দারা, রাজনৈতিক দলগুলিও।

বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকায় হলের চেয়ার, ফ্যান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ সব ধীরে ধীরে চুরি হয়ে যায়। কেউ কোনওদিন পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেনি। বীরপাড়ার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দাদের কাছে এখন ভুতবাড়ি নামে পরিচিত ওই হলটি। রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা নিরঞ্জন পাল জানান, বাড়ির পাশে কমিউনিটি হল হবে। নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বাস্তবের সঙ্গে কত ফারাক দেখলাম। গোটাটাই এখন ভুতবাড়ি নামে পরিচিত। এখন সরকার, প্রশাসন উদ্যোগী হলে কাজ হবে। গোটা বীরপাড়ার মানুষ উপকৃত হবে।

নির্মাণ কাজ যখন শুরু হয় তখন ছিল অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা। গত এক বছর ধরে আলিপুরদুয়ার জেলার অংশ বীরপাড়া। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নুরজাহান বেগম বলেন, “বীরপাড়ার কমিউনিটি হলের ব্যাপারে পুরানো নথিপত্র ঘেঁটে বিষয়টি দে‌খতে হবে। বিষয়টি দেখব।’’

আর আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা ওই কমিউনিটি হলের কথা এদিনই প্রশন জানেন। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম শুনলাম বীরপাড়ায় এমন একটা কমিউনিটি হল রয়েছে। আমরা কয়েক মাস আগে দায়িত্বে এসেছি। দুর্নীতির অভিযোগ কি ছিল বা এখন কী করা যায় তা দেখব।” তৎকালীন বীরপাড়ার ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান বুধুয়া লাকড়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল দুর্নীতির। বুধুয়া লাকড়া অবশ্য বলেন, “আমি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। কোথায় কী হয়েছিল বলতে পারব না।”

বীরপাড়ার আরএসপি নেতা গোপাল প্রধান বলেন, “আমরা চাই দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট সামনে আনা হোক। কেউ দোষী হলে তার সাজা দেওয়া দরকার। তাই বলে বীরপাড়ার বাসিন্দাদের চাহিদার কমিউনিটি হল এইভাবে পড়ে থাকবে তা মানা যায় না।’’ হল চালু হোক তা চান তৃণমূল নেতারাও। বীরপাড়ার তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক মান্না জৈন জানান, দুর্নীতি করেছেন তখনকার বাম নেতারা। আমাদের দাবিতে, তদন্ত হলেও আমরা কিছুই জানতে পারিনি। এখন এলাকায় ভুতুড়ে বাড়ি, সমাজবিরোধীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। আমরাও প্রশাসনিক মহলে হলটি দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Community hall birpara rajkumar modak corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE