Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মান্ডিতে নয়া নালিশ

ভেট দিলে ফের ডেট

তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা না পেলেও অনেকেই প্রথমবারের পর দ্বিতীয়বার ধান বিক্রির ‘ডেট’ পাচ্ছেন। এমনকী, দ্বিতীয় বার সুযোগ পাওয়া চাষিরা নির্দিষ্ট ‘ডেট’ পেয়ে ধান বিক্রিও করে যাচ্ছেন। অভিযোগ, অবস্থাপন্ন চাষি এবং চাষির পরিচয়ে ফড়েরাই মূলত এই সুযোগ পাচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২০
Share: Save:

প্রথম বার ধান বিক্রির পর পরের দফার জন্য আর ‘ডেট’ পাচ্ছেন না চাষিরা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারি-সহ বেশ কিছু ব্লকে এই অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, অনেক চাষিকেই দ্বিতীয় বার ধান বিক্রির ‘ডেট’ দিচ্ছেন না কিসান মান্ডিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীরা। এর জেরে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের চাষিরা।

তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা না পেলেও অনেকেই প্রথমবারের পর দ্বিতীয়বার ধান বিক্রির ‘ডেট’ পাচ্ছেন। এমনকী, দ্বিতীয় বার সুযোগ পাওয়া চাষিরা নির্দিষ্ট ‘ডেট’ পেয়ে ধান বিক্রিও করে যাচ্ছেন। অভিযোগ, অবস্থাপন্ন চাষি এবং চাষির পরিচয়ে ফড়েরাই মূলত এই সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ চাষিরা সুযোগ পাচ্ছেন না কেন? কিসানমান্ডিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঘুষের অভিযোগ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সাধারণ চাষির অভিযোগ, আর্থিক ভাবে সচ্ছল চাষিরা প্রথমবার ধান বিক্রির পর মান্ডির কর্মীদের মোটা টাকা ঘুষ দিয়ে পরের ‘ডেট’ নিচ্ছেন। অথচ স্বল্প আয়ের চাষিদের দ্বিতীয় ‘ডেট’ দেওয়াই হচ্ছে না। এর পিছনে ফড়েরাও রয়েছেন বলে অভিযোগ।

কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি নিয়ে এর আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘুষ দিয়ে ‘ডেট’ নেওয়ার অভিযোগ এই প্রথম বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। তবে ঘুষের বিষয়টি মানতে চাননি মান্ডিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মী বা পদাধিকারীই। জেলার খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় ও মহকুমা খাদ্য নিয়ামক শঙ্খজিৎ কবিরাজকে এটা নিয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন না তোলায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিদিন একজন কৃষক ২০ কুইন্টাল করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। প্রথমবার ধান বিক্রি করলে ১৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বার ধান বিক্রির ‘ডেট’ দেন মান্ডির সরকারি কর্মীরা। আর এই ডেট দেওয়া নিয়েই চরম দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, দ্বিতীয় বার ধান বিক্রি করতে মান্ডিতে গেলে চাষিদের বলা হচ্ছে, যাঁদের কাছ থেকে এখনও ধান কেনা হয়নি, তাঁদের কাছে সেই ধান কেনার পরে দ্বিতীয় বারের ডেট দেওয়া হবে। এই যুক্তিতে দিনের পর দিন সাধারণ চাষিদের ঘোরানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।

বংশীহারি ব্লকের কুমারসইয়ের বাসিন্দা সামসুদ্দিন মিঞা গত ৫ ডিসেম্বর বুনিয়াদপুর কিসান মান্ডিতে সাত কুইন্টাল ধান বিক্রি করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ধান বিক্রি করতে মান্ডিতে গেলে তাঁকে আর ডেট দিচ্ছেন না সরকারি কর্মীরা। সেই থেকে দিনের পর দিন তিনি ঘুরছেন ধান বিক্রির জন্য। মেয়েকে হস্টেলে ভর্তির জন্য টাকা প্রয়োজন। ধান বিক্রি করতে না-পারায় তাই চরম সমস্যা পড়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘একমাস থেকে ঘুরছি ধান বিক্রির জন্য। কিন্তু আমাকে ডেটই দিচ্ছে না। অথচ, আমার পরে অনেকেই দু’তিনবার করে ধান বিক্রি করল। আমার মেয়েকে হস্টেলে পাঠাতে টাকার দরকার। ধান বিক্রি করতে না পারলে বিপাকে পড়ব।’’

এই সমস্যার জেরে খোলা বাজারে চাষিদের কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেই ধান ফড়েরা চাষি সেজে কিনে মান্ডিতে যোগসাজশ করে টাকার বিনিময়ে ‘ডেট’ নিয়ে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forgery Rice Trading
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE