Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিলেই ‘কনফার্মড’ হচ্ছে টিকিট

টিকিট সংরক্ষণে অনিয়ম রুখতে সম্প্রতি রেল বোর্ড নির্দেশ দিয়েছে, এজেন্সি মারফত কাটা টিকিটে ‘জরুরি কোটা’র সুবিধে মিলবে না। যদিও অভিযোগ, মোটা টাকা ফেললেই বিভিন্ন এজেন্সি জরুরি কোটার টিকিট পাইয়ে দিচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

মঙ্গলবার দুপুর একটা। বিকেলে ট্রেনে কলকাতা যা্ওয়ার বাতানুকুল টু টায়ার কামরার বুকিং চাই শুনে নিশ্চিন্তে ‘হ্যাঁ’ করলেন এজেন্ট। প্রতি টিকিটে ৮০০ টাকা করে বেশি দর হাকলেন। রিজার্ভেশন কাউন্টারে তৎকালেও টিকিট মিলছে না। কিন্তু তিনি কী করে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন? এজেন্টের উত্তর, ‘‘আমাদের নানা কোটা আছে। সব হয়ে যাবে। শুধু আমাদের সার্ভিস চার্জটা দিতে হবে।’’

টিকিট সংরক্ষণে অনিয়ম রুখতে সম্প্রতি রেল বোর্ড নির্দেশ দিয়েছে, এজেন্সি মারফত কাটা টিকিটে ‘জরুরি কোটা’র সুবিধে মিলবে না। যদিও অভিযোগ, মোটা টাকা ফেললেই বিভিন্ন এজেন্সি জরুরি কোটার টিকিট পাইয়ে দিচ্ছে। একাংশ রেল আধিকারিকদের মদত ছাড়া এমনটা অসম্ভব বলে দাবি রেলকর্মীদের। এ বিষয়ে অভিযোগ পৌঁছেছে রেল মন্ত্রকেও। সূত্রের খবর উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কয়েকজন পদস্থ আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীর ট্যুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট হয়েছে। সেই ভিডিও ফুটেজে রয়েছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের এক কর্তার বক্তব্য। ঘটনাটি শিলিগুড়িরই। মাস খানেক আগে এক বেসরকারি টিকিট বুকিং এজেন্সির দফতর উদ্বোধন করতে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন ওই কর্তা। অভিযোগ, উদ্বোধনের দিন বক্তব্যে রেলকর্তা দাবি করেন ওই এজেন্সির থেকে জরুরি কোটার টিকিটও মিলবে। জরুরি কোটা নিয়ে রেল মন্ত্রকের বিধি নিষেধের প্রতিলিপি এবং রেল কর্তার সেই বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট প্রধানমন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীর ট্যুইটারে পোস্ট হওয়ার পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই রেল কর্তা কী ভাবে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করলেন প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।

অভিযোগ, এজেন্সিদের একাংশের সঙ্গে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর মালিগাঁওয়ের একাংশ কর্তার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এজেন্সির থেকে সরাসরি পিএনআর নম্বর মালিগাঁওতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই মতো জরুরি বিভাগে টিকিট কনফার্মড করার নির্দেশ বিভিন্ন বিভাগে পৌঁছে যায়। সব কিছু জেনেও রেলের শীর্ষকর্তারা চোখ বুজে রয়েছেন বলে অভিযোগ। দাদাল চক্রের দাপটে জরুরি কোটায় আবেদনকারী বৈধ যাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। টিকিট বুকিং সহ বাণিজ্যিক বিষয়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার বীরেন্দ্র গুপ্তকে মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএস করলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

রেল সূত্রের কবর জরুরি কোটার টিকিটকে রেলের পরিভাষায় ‘এইচও’ (হেড অফিস) কোটা বলা হয়। চিকিৎসা, শিক্ষা-সহ আপদকালীন কিছু কারণে এই বিভাগে জরুরি ভিত্তিতে ওয়েটিং লিস্টে থাকা টিকিট কনফার্মড করা হয়। কোনও জনপ্রতিনিধি, প্রশসানিকর আধিকারিক এমনকী যাত্রী ব্যক্তিগত ভাবেও এই কোটার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে শর্ত হল যাত্রীকে সরাসরি টিকিট কাটতে হবে। কোনও এজেন্সি মারফত কাটা টিকিটে জরুরি কোটার সুযোগ দেওয়া হয় না। কোটার সুবিধে পেতে হলে রেলের অফিসের ড্রপ বক্সে আবেদন জমা দিতে হয়। প্রতিটি ট্রেনে কতগুলি জরুরি ভিত্তিতে টিকিট কনফার্মড করা হবে তার সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। দালাল চক্র এই কোটার টিকিট দখল করায় সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে যেমন তেমনিই প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ। রেলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সরাসপি মন্ত্রকে ট্যুইটে অভিযোগ হওয়ায় নড়াচড়া হয়েছে। তার ফল কী হয় সেটাই দেখার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE