প্রতীকী ছবি।
স্কুলে যাওয়ার পথে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। সেই লজ্জাতে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল নবম শ্রেণির এক ছাত্রী।
সোমবারই জেলার আর একটি স্কুলের সামনে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। সেই ছাত্রী তারপরেই জেলা জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। অনেকেই দাবি করেন, স্কুলগুলোর সামনে যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষও তা নিয়ে সরব হন। পুলিশও জানায়, তারা নজরদারি রাখে। তা আরও বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু তার মাত্র এক দিনের মাথাতেই আবার এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করায়, ক্ষোভ আরও বেড়েছে। এক অভিভাবক জানান, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনই প্রশাসনের উচিত রাশ টানা। এক প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে অনেক পরিবার মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চাইবে না।
কোচবিহার প্রত্যন্ত এবং সীমান্তবর্তী জেলা। বাংলাদেশ ও অসম দুই সীমান্তই রয়েছে। এই জেলার কোনও কোনও স্কুল একেবারেই সীমান্ত লাগোয়া। যেমন চ্যাংরাবান্ধা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী সরকার জানান, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ ঘেঁষেই তাঁদের স্কুল। জমি নিয়ে সমস্যা থাকায় একটি সীমানা পাঁচিল দেওয়া যায়নি। ওই পথ ধরে অনেকেই যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “দেড় বছর হল আমি প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়েছি। প্রথমদিকে ইভটিজিং দেখে আমি পুলিশকে জানাই। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। তবে ইদানিং তেমন অভিযোগ ছিল না। ওই স্কুলে এই ঘটনায় অবাক হয়েছি।”
চ্যাংরাবান্ধার ওই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় এখনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত শুক্রবার ওই ঘটনা ঘটে। সোমবার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। ওই ছাত্রী মেখলিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
এরই মধ্যে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার দেওয়ানবস গ্রামের বাসিন্দা এক ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছে, তারই স্কুলের এক ছাত্র এবং এক বহিরাগত ওই ঘটনায় জড়িত। তারা দীর্ঘ দিন ধরেই ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। ওই দিন স্কুলে গেটের কিছুটা আগে আগে তাকে আটক করে তাঁকে জোর করে একটি গাছের তলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে বাধা দিলে তাঁকে মারধর করা হয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার জানান, “ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
ওই ছাত্রীর বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যায় তাঁর মেয়ে। তাঁরা যে যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বাড়িতে এক ছেলের চিৎকারে জানতে পারেন মেয়ে কীটনাশক খেয়েছে। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে কোচবিহারে এমজেএন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন তাঁর কাছে কিছু জানতে পারেনি তাঁরা। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে পুরো বিষয়টা জানতে পারে তাঁরা। সেই সময় ওই ঘটনা নিয়ে অভিযুক্তদের অভিভাবকদের কয়েকজন তাঁদের ফোন করে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। পুলিশে অভিযোগ জানালে ফল ভাল হবে না বলে হুমকিও দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে পুলিশকে জানিয়েছি। ওই ঘটনার বিচার চাই।” দেওয়ানবস হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অনন্ত কুমার নাগ বলেন, “ওই ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। কিন্তু পরে এক ছাত্রী বিষ খেয়েছে। এমন অন্যায় মানা হবে না। আমরা ওই ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।” ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক চন্দন সরকার বলেন, “আমরা খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে সবাই মিলে প্রতিবাদে সোচ্চার হব।” পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে জানান, সব স্কুলের সামনেই সাদা পোশাকের মহিলা পুলিশ নজর রাখছে। কোচবিহারে জেলাশাসককে এদিন স্মারকলিপি দেয় ডিএসও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy