Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাগান থেকে ক’জন এল, সংশয়

জন বার্লার অভিযোগ, “চা শ্রমিকরা যাতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য বহু বাগানেই গাড়ি আটকে দিয়েছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও প্রতি বাগান থেকে একশোর উপর মানুষ ময়নাগুড়িতে গিয়েছেন।”

উপহার: নেতা-কর্মীদের দেওয়া গন্ডার হাতে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: সন্দীপ পাল

উপহার: নেতা-কর্মীদের দেওয়া গন্ডার হাতে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: সন্দীপ পাল

নমিতেশ ঘোষ ও পার্থ চক্রবর্তী 
কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৯
Share: Save:

সভার ২৪ ঘণ্টা আগেই আলিপুরদুয়ারের বিজেপি নেতা জন বার্লা দাবি করে দেন, শুক্রবার ময়নাগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় চা বাগান ফাঁকা করে যাবেন শ্রমিকেরা। কোচবিহার বরং ছিল চুপচাপ। কিন্তু তারা যে প্রস্তুত, তা বোঝা গিয়েছিল মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রাজ্য সড়কে বিরাট তোরণ তৈরি করা থেকে। মেখলিগঞ্জে এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টিও শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই সকাল থেকে মোড়ে মোড়ে জটলা ছিল বিজেপি সমর্থকদের। পদ্মফুলের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন টাঙানো বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টি দেখে একটু মন খারাপ হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উধাও হয়ে যায়। শুধু মেখলিগঞ্জ থেকেই প্রচুর বিজেপি সমর্থক যোগ দিলেন চূড়াভাণ্ডারের জনসভায়। উল্টো দিকে, বার্লার কথা ফলেনি। আলিপুরদুয়ারে বেশ কিছু বাগানে ‘সাল ছুটি’ চলছে। কিন্তু ছুটির আওতার বাইরে থাকা বাগানগুলিতে কাজ হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। এই পরিস্থিতিতে চা বলয় থেকে কত মানুষ ময়নাগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় গেলেন, তা নিয়ে ধন্দে বিজেপি নেতাদেরই একাংশ। তৃণমূলের দাবি, সামান্য কয়েক জন ছাড়া আলিপুরদুয়ার জেলার চা বলয় থেকে মানুষ ময়নাগুড়িকে যাননি।

কেন এমন হল?

বিজেপি নেতৃত্ব দায় চাপিয়েছে তৃণমূলের উপরে। জন বার্লার অভিযোগ, “চা শ্রমিকরা যাতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য বহু বাগানেই গাড়ি আটকে দিয়েছে তৃণমূল। তা সত্ত্বেও প্রতি বাগান থেকে একশোর উপর মানুষ ময়নাগুড়িতে গিয়েছেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা কিন্তু বৃহস্পতিবারই বলেছিলেন, চা বলয় থেকে বেশি মানুষ মোদীর সভায় যাবেন না। এ দিন মোহনবাবুর বক্তব্য, “চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীকে আর বিশ্বাস করেন না। তাই আলিপুরদুয়ার জেলার কোনও বাগান থেকেই মানুষ ময়নাগুড়িতে যাননি। জেলার চা বাগানগুলি একশো শতাংশ খোলা ছিল।’’ চা বাগান মালিকদের সংগঠন ডুয়ার্স ব্র্যাঞ্চ ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে রানা দে-ও বলেন, “আলিপুরদুয়ার জেলায় আমাদের সংগঠনের সদস্য বাগানগুলো এ দিন সচল ছিল।” চা মালিকদের আর একটি সংগঠন আইটিপিএ-র উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “সাল ছুটির জন্য এ দিন কিছু বাগান বন্ধ ছিল। বাকি বাগান খোলাই ছিল।’’

চা বলয়ের ভোট উত্তরের বেশ কয়েকটি লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ। মোদীর সভায় ভিড়ের লড়াইয়ে সে ক্ষেত্রে তৃণমূলই স্বস্তিতে ছিল এ দিন।

কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মেখলিগঞ্জে স্বস্তিতে বিজেপিই। বিজেপি নেতা দধিরাম রায় বলেন, “তৃণমূল নানা ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। মানুষ উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের মেখলিগঞ্জ ব্লক সভাপতি পরেশচন্দ্র অধিকারী অবশ্য বলেন, “মেখলিগঞ্জের কয়েকটি অঞ্চলে কয়েক জন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য আছেন। ছোট ছোট গাড়িতে বিক্ষিপ্ত ভাবে তাঁরাই গিয়েছেন। তবে বিজেপি নেতারা যে দাবি করছেন, তা ভিত্তিহীন। অত কর্মী সমর্থক নিয়ে যেতে হলে অনেক বড় গাড়ি প্রয়োজন ছিল।’’

তবে বিজেপি সূত্রের খবর, মেখলিগঞ্জ ব্লকে তাদের সংগঠন অনেক মজবুত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানে ভাল ফল করেছে বিজেপি। তা ছাড়া চূড়াভাণ্ডারে মোদীর সভা সফল করতে বেশ কিছু দিন ধরেই জোরদার প্রচার চালাচ্ছিলেন মেখলিগঞ্জের বিজেপি নেতারা। সারা দিন ধরে মাইকে প্রচার করা হয়। বানানো হয় তোরণ। ঘন ঘন বৈঠক হয়। বৃষ্টির জন্য কর্মী সমর্থকের সংখ্যা যাতে কমে না যায়, সে দিকে নজর রাখতে দেখা যায় বিজেপির দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি দধিরামবাবু থেকে শুরু করে শহর মণ্ডল সভাপতি রাজীব সিংহ সরকারদের।

বিজেপি সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলা থেকেই সব থেকে বেশি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বর দাবি, সেই সংখ্যা কুড়ি হাজারের উপরে। তৃণমূলের দাবি, সব মিলিয়েই দুই-তিন হাজার বিজেপি-কর্মী সমর্থক প্রধানমন্ত্রীর সভায় গিয়েছেন। (সহ প্রতিবেদন: সজল দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Tea Garden Mainaguri Rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE