Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Ramjan Ali

সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছিল রমজান খুনেও

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০১:৪২
Share: Save:

প্রায় ২৬ বছর আগে এক হাড় কাঁপানো শীতের রাত। তার মধ্যেই এমএলএ হস্টেলে এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল কলকাতা শহর, তার পরে গোটা রাজ্য। হস্টেলে নিজের ঘরে খুন হয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক রমজান আলি। পুলিশের তদন্তে প্রকাশ, সেই সময় সেই ঘরে হাজির ছিলেন রমজানের স্ত্রী তালাত সুলতানা এবং প্রাক্তন বিধায়ক রেণুলীনা সুব্বা। পরে তদন্তে উঠে আসে তালাত এবং রমজানের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক নুরুল ইসলামের মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা। দু’জনই বর্তমানে জেলে বন্দি।

উত্তর দিনাজপুরেরই হেমতাবাদে বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে সোমবার। যা নিয়ে খুনের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তবে প্রাথমিক তদন্তের শেষে প্রশাসনের বক্তব্য, সম্ভবত এটি আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু সেই ঘটনাও কয়েকটি জবাব না-পাওয়া প্রশ্ন রেখে গিয়েছে। যেমন, বাড়ি থেকে এত দূরে এসে আত্মহত্যা কেন করলেন বিধায়ক বা এত দূর কাদা ঠেঙিয়ে এলেন, কিন্তু পায়ের তলায় ছাড়া পোশাকের কোথাও কাদা লেগে নেই কেন?

এই সব রহস্যের মধ্যে তাই অনেকেই রমজান আলি খুনের কথা নতুন করে বলতে শুরু করেছেন। ১৯৯৪ সালের ২০ ডিসেম্বরের রাত ছিল সেটা। সময়টা মুঠোফোন বা ইন্টারনেটের নয়। সেই খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে লালবাজারের গোয়েন্দারা কম বেগ পেতে হয়নি। এ বারের ঘটনার সঙ্গে মিলও ছিল কিছু ক্ষেত্রে। শাসকপক্ষ বামফ্রন্টের বিধায়ক হলেও রমজানি আলি খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিল বিরোধী কংগ্রেস। সেই দাবিতে তারা বন্‌ধও ডাকে। শাসকজোটে থাকা সত্ত্বেও সেই বন্‌ধকে সমর্থন করেছিল রমজানের দল ফরওয়ার্ড ব্লক। শাসকজোটের মধ্যে কোন্দলে রমজানকে খুন হতে হয়েছে— এই বলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদও জানায় ফব।

রাজনৈতিক এই চাপে কার্যত ঘুম ছুটে গিয়েছিল লালবাজার গোয়েন্দা দফতরের। কী ভাবে এমএলএ হস্টেলের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে এক জন এসে বিধায়ককে খুন করে যায় কোনও দুষ্কৃতী, উঠেছিল সেই প্রশ্নও। দফায় দফায় বয়ান বদলেছিলেন রমজানের স্ত্রী তালাত। প্রথমে তিনি পুলিশকে বলেন, চার দুষ্কৃতী এসে তাঁদের মারধর করে অজ্ঞান করে দেয়। জ্ঞান হয়ে দেখেন, হাত-পা বাঁধা। পাশে পড়ে আছেন রমজান। পরে আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন, রমজানের একসময়ের গাড়ির চালক রবি শিকদার এসে খুন করেছে। নিজের সঙ্গে রবির সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেন।

লালবাজার সূত্র বলছে, কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, রবি সে দিন নদিয়ায় নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সে প্রমাণ এতই অকাট্য যে জামিন পেয়ে যান রবি। নতুন পথে ভাবতে শুরু করে পুলিশ। একটি দল যায় উত্তর দিনাজপুর। আর একটি দল কলকাতার এমএলএ হস্টেলের আশপাশের দু-তিন কিলোমিটার চষে ফেলে। তখন অনেকেই এসটিডি বুথ থেকে ফোন করতেন। সেই সব বুথে ঘুরতে থাকেন পুলিশের লোকজন। শেষ পর্যন্ত জানুয়ারির শেষ দিকে গিয়ে চৌরঙ্গি লেনের একটি পিসিও বুথ থেকে জানা যায়, সেখান থেকে নিয়মিত দিল্লির একটি নম্বরে ফোন করতেন তালাত।

এই নম্বরের সূত্র ধরেই শেষ অবধি পুলিশ খুঁজে পায় নুরুল ইসলামকে। ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বিহার থেকে পাকড়াও করে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, মূল দুই অভিযুক্ত নুরুল এবং তালাত আদালতে দোষ স্বীকার না করলেও পারিপার্শ্বিক প্রমাণ, রমজানের ডায়েরি আর নুরুলকে লেখা তালাতের চিঠি থেকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাঁদের। হয়ে যায় যাবজ্জীবন সাজা।

রমজানের ছেলে আলি ইমরান রমজ (ভিক্টর) তখন স্কুল পড়ুয়া। বর্তমান তিনি চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক। ভিক্টরের অবশ্য দাবি, ‘‘বাবাকে ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু এই খুনের সঙ্গে মা জড়িত নন। মাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramjan Ali CBI Congress Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE