Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কেন যেতে হচ্ছে ভিন্ রাজ্যে, উঠছে প্রশ্ন

এলাকায় কাজের অভাব। রুজির টানে তাই ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে য়েতেই হচ্ছে মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষকে। 

ঘটানাস্থলে চলছে পরীক্ষা।—ছবি পিটিআই

ঘটানাস্থলে চলছে পরীক্ষা।—ছবি পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানিকচক শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪১
Share: Save:

এলাকায় কাজের অভাব। রুজির টানে তাই ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে য়েতেই হচ্ছে মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোর প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষকে।

এক সময় ঘরে ঘরে ছিল হস্তচালিত তাঁত। যন্ত্রচালিত তাঁত আসতেই কমে যায় উপার্জন। তাঁতের ব্যবসা ছেড়ে কার্পেট তৈরির কাজে উত্তরপ্রদেশের ভদোহীতে পাড়ি দিতে শুরু করেন মালদহের মানিকচকের এনায়েতপুর গ্রামের মোমিন, আনসারি সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অনেকে। প্রায় ৩০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় উত্তরপ্রদেশে গিয়ে কার্পেট তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন জেলার কয়েকশো শ্রমিক। শনিবার ভদোহীতেই কার্পেট তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় মালদহের মোমিন ও আনসারি সম্প্রদায়ের আট জন শ্রমিকের।

এই নিয়ে বেশ কয়েকবার ভিন্ রাজ্যে মারা গেলেন মালদ এবং দুই দিনাজপুরের বেশ কয়েক জন। তখনকার মতো হইচই হলেও পরে আবার সেই ঝুঁকি নিয়েই বাইরে যেতে হয়। ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের যাওয়া আটকাতে সরকার কেন তৎপর নয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রবিবার দুপুরে এনায়েতপুর গ্রামে গিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরায়ণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, সরকার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। কার্পেট তৈরির কাজ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার শ্রমিকদের নিয়ে ভাবছে। আমাদের রাজ্যে প্রচুর দক্ষ কারিগর রয়েছেন। এ ছাড়া রাজ্য সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটির শিল্পে জোর দিয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও আহ্বান করা হচ্ছে, যাতে কার্পেট নিয়ে তাঁরা আগ্রহী হন।”

বছর পাঁচেক আগে মুম্বই-এ বহুতল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল মোথাবাড়ির আট জন শ্রমিকের। ভিন্‌ রাজ্যে কারা কখন কাজে যাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশাসন গোড়া থেকেই উদাসীন বলে অভিযোগ। ওই শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই নেই তাদের কাছে। কিছু ঘটলে যেমন বলা হয় এ বারও তেমনই প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, শ্রম দফতরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কেন কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে ছুটতে হচ্ছে জেলার শ্রমিকদের? মানিকচকের এনায়েতপুরের প্রবীণ ফিরোজ মোমিন বলেন, “আগে বাড়িতেই তাঁত বুনতাম। যন্ত্রচালিত তাঁত আসায় আমাদের তাঁতের উপার্জন কমে যায়। তখন কার্পেটের কাজে উত্তরপ্রদেশে গিয়েছিলাম। প্রায় ১৫ বছর কার্পেটের কাজ করেছি। এখন বয়স হওয়ায় যেতে পারি না। আমার দুই ছেলে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে কার্পেট তৈরি করছেন।” এখানে মজুরিও কম মেলে বলে দাবি করেন রেহান আনসারি নামে এক কার্পেট শ্রমিক। তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশ থেকে সুতো নিয়ে এসে বাড়িতেই অনেকে কার্পেট তৈরি করেন। তারপরে সেই কার্পেট পাঠিয়ে দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশে কাজ করলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। এখানে তুলনায় অনেক কম পাওয়া যায়।” মালদহের জেলা শাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে যাওয়া আটকাতে প্রচার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhadohi Fire Labour Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE