তৃণমূলের এই প্রচারপত্র ঘিরেই বিতর্ক
দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের ‘দ্বিতীয় ইস্তাহার’ বা প্রচারপত্রকে ঘিরেও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের খতিয়ান ছবি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ওই ১৪টি ভাঁজের রঙিন প্রচারপত্রে।
অভিযোগ, ওই প্রচারপত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, নানা প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য ছাড়াও একাধিকবার তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদন করা হলেও কোথাও প্রকাশক বা মুদ্রকের উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে যা পুরোপুরি বেআইনি। শহরের তৃণমূল নেতারা তো বটেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তা বিলি করছেন। ভোটের ছয় দিন আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে এমন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামফ্রন্ট।
বামফ্রন্টের জেলা আহ্বায়ক তথা মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল যে কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না, তা এটা থেকেই প্রমাণ হচ্ছে। ওঁরা শাসক দল, ক্ষমতায় আছে বলে যা ইচ্ছা তাই করছে। কোনও প্রচারপত্র বা ইস্তাহার মুদ্রক, প্রকাশকের নাম, ঠিকানা ছাড়া ছাপিয়ে বিলিই করা যায় না।’’ অশোকবাবু জানান, বহু জায়গায় ওই প্রচারপত্র বিলিও হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব।’’
এ বারের শহরের পুরভোটে প্রথম ইস্তাহার প্রকাশ করে বামফ্রন্ট। তার কিছু দিন পরে তৃণমূলের তরফেও একটি ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই সময় দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু জানিয়ে দেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যে মূল ইস্তাহারের একটি ‘সাপ্লিমেন্টারি’ প্রচারপত্র বার করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি মতোই গত সপ্তাহ থেকেই ওই রঙিন প্রচারপত্র ছাপিয়ে বিলি করা শুরু হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের ইস্তাহার একটিই হয়েছে। দ্বিতীয় ইস্তাহারের কোনও বিষয় নেই। ইস্তাহারটি বড় হয়ে যাচ্ছিল, তাই আমরা একটি সুদৃ্শ্য প্রচারপত্র তৈরি করেছি। তবে তাতে প্রশাসক বা মুদ্রকের হিসাবে কারও নাম নেই বলে শুনেছি। মনে হচ্ছে, কিছু ভুল হয়ে গিয়েছে। দ্রুত বিষয়টি সংশোধন করা নেওয়া হবে।’’ উল্লেখ্য, এর আগে মন্ত্রী হিসাবে নাগরিক সভায় বাসিন্দাদের আমন্ত্রণ করায় বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে।
দলীয় সূত্রের খবর, এ বার শিলিগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতমবাবুর ভোটে দাঁড়ানো প্রায় চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হয়। শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারও শুরু করেন মন্ত্রী। সেই মতো প্রশাসক বোর্ডের আওতায় থাকায় পুরসভার কাজকর্ম ছাড়াও মন্ত্রী গৌতমবাবুর দায়িত্বে থাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথারিটির (এসজেডিএ) নানা প্রকল্প তুলে ধরে ইস্তেহার, প্রচারপত্র তৈরির প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু দলের নির্দেশে গৌতমবাবু টিকিট পাননি। তার পরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে একটি কর্মিসভায় এসে স্থানীয় বিষয়বস্তু ছাড়াও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ সরকারের নানা প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরার নির্দেশ দেন। তার পরেই ইস্তেহারে কিছু অদলবদল করা হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
তৃণমূলের প্রচারপত্র নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘কোন দল কী প্রচারপত্র বিলি করছে, তাতে কী আছে তা নির্বাচন কমিশনেরও দেখা দরকার। তা ঠিকঠাক দেখা হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। নইলে প্রকাশক, মুদ্রকের নাম ছাড়া কী ভাবে প্রচারপত্র বিলি হয়।’’
‘স্বাগত সাকার স্বপ্ন-শীলিত, শিল্পীত শিলিগুড়ি’ নাম দিয়ে তৃণমূল যে প্রচারপত্রটি বিলি করছে, তাতে শহরের পরিবহণ, সাজসজ্জা, সেতু, বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ-মঞ্চ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খেলাধূলা, জল, বিদ্যুৎ, অত্যাধুনিক জঞ্জাল অপসারণ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের ছবি দিয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এ ছাড়াও পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের আমলে পুরসভা কী কাজ করেছে তারও আলাদা খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়িকে ঘিরে সরকারের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যা, সাফারি পার্ক, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি বিকল্প সড়ক সহ একাধিক প্রকল্পের উল্লেখও রয়েছে। প্রকল্পগুলির খরচ আলাদা ভাবে দেওয়া ছাড়াও শিলিগুড়ি পুর এলাকায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ২২৯ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩০ টাকার টাকার হিসাবও আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy