— প্রতীকী ছবি।
মালদহের ‘মুকুট’ চলে গিয়েছে কোচবিহারের মাথায়। যদিও একে প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘরোয়া আলোচনায় ‘কাঁটার মুকুট’ বলেই উল্লেখ করছেন। সরকারি তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক ধরপাকড়ে যাবতীয় অভিযোগের আঙুল কোচবিহারের দিকেই। সেই তথ্য থেকেই গোয়েন্দা বিভাগ এবং প্রশাসনের ধারণা, পূর্ব প্রান্তের এই জেলাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক গাঁজা পাচার চক্র। অভিযোগ, তাদের মাধ্যমে কখনও গাঁজা যাচ্ছে ভিন রাজ্যে, কখনও ভিন দেশে। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, কখনও উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্য থেকে গাঁজা কোচবিহার, শিলিগুড়ি হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যত্র, এমনকী, কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য প্রান্তেও।
এর আগে ‘গাঁজা হাব’ হিসেবে ‘নামডাক’ ছিল মালদহের একটি অংশের। কিন্তু গত দু’বছরে প্রশাসনের তরফে সেই জেলায় ব্যাপক হারে অভিযান হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় গাঁজার খেত নষ্ট করে দেওয়া থেকে শুরু করে ড্রোন দিয়ে নজরদারি, সবই চলেছে পুরোদমে। ফল মিলেছে হাতেনাতে। এ বছর সেই জেলায় দু’একটি জায়গা ছাড়া বেআইনি গাঁজা চাষ প্রায় বন্ধ। উল্টে কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি, এই অঞ্চলে একাধিক বার গাঁজা ধরা পড়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কোচবিহারের নিশিগঞ্জ এলাকায় তিন বার গাঁজা ধরেছে পুলিশ। শিলিগুড়ি ও এনজেপি এলাকায় ধরা পড়েছে চার বার। সব থেকে বড় আটকটি হয়েছে এ বছর মার্চে, নিশিগঞ্জে। এক ধাক্কায় ৭৭০ কেজি গাঁজা পাকড়াও করেছিল সেই এলাকার পুলিশ। সেপ্টেম্বর থেকে গত তিন মাসে পাঁচ বারে ৬৫০ কেজির বেশি গাঁজা পাকড়াও করেছে উত্তরবঙ্গের পুলিশ।
প্রশাসনিক স্তরে স্বীকার করা হচ্ছে, কোচবিহারে অভিযান চালিয়েও গাঁজা চাষ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, অন্য রাজ্য থেকেও গাঁজা যাওয়ার পথ কোচবিহার। তাঁরা উদাহরণ হিসেবে বলছেন, যেমন, নমনি অসম হয়ে কোচবিহারের মধ্য দিয়ে মণিপুরি গাঁজাও ঢুকছে রাজ্যে। গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, এই জেলা থেকে একাধিক রুট ধরে শিলিগুড়ির মধ্য দিয়ে গাঁজা যাচ্ছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি এবং দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গোয়েন্দাদের একটি অংশের দাবি, পড়শি দেশগুলিতেও গাঁজা যায় নিয়মিত।
গোয়েন্দা সূত্রে বলা হচ্ছে, গম, আনাজ চাষের বদলে অনেক বেশি ‘লাভজনক’ এই চাষ, এখানে ‘বিনিয়োগ’ করছে দিল্লির কারবারিরাও। বিএসএফ, এসএসবি ও পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২, ৫ ও ১০ কেজি হিসেবে তিনটি রকমের প্যাকেট প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে প্যাকেট করে পাচারের ব্যবস্থা হয় বলে দাবি পুলিশ সূত্রে।
এসএসবি-র একটি সূত্রে জানাচ্ছে, দিল্লির কালিন্দিনগর, লক্ষ্মীনগর ও উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় যাচ্ছে কোচবিহারের গাঁজা। বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি আজমল সিংহ কাঠাত বলেন, ‘‘শিলিগুড়িকে ট্রানজ়িট পয়েন্ট বানিয়ে গাঁজা পাচার চলছে। বাংলাদেশেও এ পার থেকে গাঁজা যাচ্ছে।’’ পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাচার বন্ধ করতে চেষ্টা চলছে। এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি টমাস চাকো বলেন, ‘‘গাঁজা পাচার চক্র নিয়ে তদন্ত চলছে।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডেও বলেন, ‘‘আমরা নজরদারি চালাচ্ছি। যে সব এলাকা থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে গাঁজা নষ্ট করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy