প্রতীকী ছবি
অন্য রোগীদের সুরক্ষার কথা ভেবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় শিলিগুড়ি তথা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকের পর এ কথা জানান রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় গঠিত টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী।
ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, উত্তরবঙ্গে করোনা হাসপাতাল হিসেবে শুধু থাকবে মাটিগাড়ার ডক্টর চ্যাংস হাসপাতাল। উত্তরবঙ্গে কারও করোনা সংক্রমণ হলে, তাঁকে মাটিগাড়ার হাসপাতালে আনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
বাগডোগরায় নিয়মিত যাত্রী পরিষেবা বন্ধ। তাই গ্লোবাল ভেক্ট্রা নামে সংস্থার কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া সাত আসনের ইসি-১৩৫ হেলিকপ্টারে চেপে শিলিগুড়ি পৌঁছন দুই অভিজ্ঞ সরকারি চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এবং জিকে ঢালি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, আপাতত চিকিসক ঢালি বেশ কিছু দিন উত্তরবঙ্গে থাকবেন। অভিজিৎবাবু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে শুক্র-শনিবারের মধ্যে আবার ওই হেলিকপ্টারে করে ফিরে আসবেন কলকাতায়। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ রিপোর্ট দেওয়ার কথা তাঁর।
এ দিন শিলিগুড়ি পৌঁছে দু’জন বৈঠকে বসে যান। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়, প্রথমত, মাটিগাড়ার হাসপাতালটিকেই উত্তরবঙ্গে একমাত্র করোনা হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে করোনা আক্রান্তদের দূরে রাখা হবে। কারণ, এই হাসপাতালটিতে সারা উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক ধরনের রোগী আসেন। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। তৃতীয়ত, কোথাও সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কোনও সন্দেহভাজন রোগী এলে তাঁকে প্রাথমিক ভাবে সেখানকার করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। শিলিগুড়িতে মেডিকা নর্থ বেঙ্গল ক্লিনিককে এই জন্য বাছা হয়েছে। সেখানে সরকারি ব্যবস্থায় ১৪০ শয্যার সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (সারি) চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হচ্ছে। সেখানে ওই রোগীকে রেখে তাঁর সোয়াব পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরাল ল্যাবরেটরিতে। সেখানে পজিটিভ রিপোর্ট এলে ওই রোগীকে মাটিগাড়ার করোনা হাসপাতালে পাঠানো হবে। রিপোর্টে কিছু না-এলে তাঁকে আগের জায়গায় ফেরত পাঠানো হবে। অন্য জেলাগুলোর ক্ষেত্রে ‘সারি’ চিকিৎসা কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট জেলাতেই থাকবে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলাগুলিতে করোনা হাসপাতালের পরিকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু হবে।
অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে দূর দূরান্ত থেকে নানা ধরনের রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। কোভিড রোগীদের এই হাসপাতালে রাখা যায় না। মানুষ যাতে মনে না করে, অন্য রোগীদের কোভিড রোগীদের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের বাইরে এই ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে একটি টিম বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকবে। সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগীদের কোথায় পাঠানো হবে, তাঁরা ঠিক করবেন।
বেসরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। কেন না মাটিগাড়ার হাসপাতালের চরিত্র বদলের পরে সেখানকার চিকিৎসকরা কাজ করছেন না, নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
অভিজিৎ চৌধুরী জানান, তিনি ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে কথা বলবেন।।
অভিজিৎবাবু আরও বলেন, ‘‘এখানে পরিকাঠামো নেই বলে রব তোলা হচ্ছে। সেটা ঠিক নয়। পরিকাঠামো, সরঞ্জাম রয়েছে। সমন্বয়ের কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। সেটা গুছোতেই এই ব্যবস্থা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চিকিৎসক ঢালি দুই সপ্তাহ এখানে থেকে করোনার চিকিৎসার বিষয়টির সমন্বয় সাধন করবেন। উত্তরবঙ্গে থাকেন বলে আপনারা নিজেদের একা ভাববেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy