প্রতীকী ছবি
কালিম্পং থেকে শিলিগুড়ি হয়ে চেন্নাই। আবার চেন্নাই থেকে শিলিগুড়ি হয়ে কালিম্পং। ছোট মেয়ের গলব্লাডারে স্টোনের চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাতায়াতের কালিম্পঙের ওই মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, নাকি তাঁরও দেশের বহু করোনা রোগীর মতো বিদেশ যোগ রয়েছে— সেটাই এখন খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার বিকেল অবধি স্পষ্টভাবে স্বাস্থ্য কর্তারা কোনও বিদেশ যোগের কথা জানাননি।
আপাতত অফিসারেরা জেনেছেন, চেন্নাই-শিলিগুড়ি-কালিম্পং মিলিয়ে একাধিক বাড়িতে যাতায়াত, পাহাড়ের একটি নার্সিংহোম আর শিলিগুড়ির একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও গিয়েছিলেন ওই মহিলা।
উত্তরবঙ্গের প্রথম করোনা আক্রান্ত এই মহিলা গত ৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ অবধি, অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে অবধি কার কার সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন, তার খোঁজে নেমে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
ওই মহিলার সংস্পর্শে আসায় তিনজনকে রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন সেই মহিলার বাড়ির পরিচারিকা। এছাড়া একই কারণে আরও ১৪ জনকে জলপাইগুড়ির কোয়রান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পরিবারের সদস্য রয়েছেন বলে সূত্রের খবর। কালিম্পং পাহাড়ে শহরের বাইরে একটি স্কুলকে আইসোলেশনের জন্য বাছাই করে তৈরি হয়। কত জন মহিলার সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন, তার তালিকাও তৈরি হচ্ছে। কালিম্পঙের এক চিকিৎসক হোম আইসোলেশনে আছেন। তাঁকেও সরকারি ব্যবস্থায় আনা হতে পারে। শিলিগুড়িতে থাকা ওই মহিলার স্বামী, আত্মীয়, চালক এবং তাঁদের পরিবার মিলিয়ে ৮ জনের মতো আছেন। তাঁদের আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রের খবর, মহিলার স্বামীর কালিম্পং শহরে বড় গয়নার শোরুম রয়েছে। পাহাড়ে বাড়ি ছাড়াও শিলিগুড়ি শহরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডেই দু’টি বড়় বাড়ি রয়েছে। একটি বাড়িতে ৫ জন ভাড়়াটিয়া আছেন। এক মেয়ে মহারাষ্ট্রে থাকেন। ছেলে ছিলেন কালিম্পঙে। এক মেয়েকে নিয়ে তিনি চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে ১৮ মার্চ অবধি ছিলেন। ১৯ মার্চ সকালের বিমানে চেন্নাই থেকে তিনি মেয়েকে নিয়ে শিলিগুড়ি ফেরেন। তার পরে ওই এক বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে পাহাড়ে ফেরেন। সঙ্গে নিজেদের গাড়ি ছিল। চালক শিলিগুড়ি ওই এলাকাতেই পরিবার নিয়ে থাকেন।
কিন্তু কাশি, হালকা জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে পাহাড়ে ফিরেই মহিলা পরের দিন কালিম্পঙের এক নার্সিংহোমের চিকিৎসককে দেখান। সঙ্গে পরিবারের একজন ছিলেন। ছোট গাড়ির চালককে নিয়ে তিনি চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়েছিলেন।
পরে ২৫ মার্চ তিনি আবার পাহাড়ের নার্সিংহোমে চিকিৎসকের চেম্বারে যান। এবার সঙ্গে স্বামী এবং ছেলে ছিলেন। তাঁকে সেখানে এক্স-রে করানো হয়। টিউবারকিলোসিস পরীক্ষার জন্যও বলা হয়। এই চিকিৎসক এখন আইসোলেশনে আছেন। পরের দিন মহিলা স্বামীকে নিয়ে শিলিগুড়ি আসেন। নিজেদের বাড়িতে উঠে ফের চালককে নিয়ে সেবক রোডের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানেও এক্স-রে, সিটিস্ক্যান করানো হয় তাঁর।
সেখানে মহিলার পরিস্থিতি দেখে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফের শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরের বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। তার পরে তাঁর স্বামী পরিবারের আর এক সদস্যকে নিয়ে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। প্রথমে বুকের সংক্রমণের (চেস্ট) আউটডোরে যান। সেখানে তাঁর লক্ষণ দেখে করোনা স্ক্রিনিং করানো হয়। ভর্তি করে নেওয়া হয় মহিলাকে।
১৯-২৬ মার্চ, এই ক’দিনে কালিম্পং, শিলিগুড়ি মিলিয়ে বহু মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন ওই মহিলা— প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিদেশ যোগ সত্যি রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। এর বাইরে বিমানের যাত্রী, পরিবার, পরিবারের পরিচিত, ভাড়াটিয়া, গাডির চালক, নার্সিংহোমের চিকিৎসক তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন। ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিক্যালের আউটডোরেও মহিলা ঘুরেছেন। তাই প্রথম থেকে পরিবার, পরিচিত, চালক, ভাড়়াটিয়া— এঁদের চিহ্নিত করে আলাদা করা হচ্ছে। গাড়িটা শিলিগুড়িতেই রয়েছে। সেটিও সুরক্ষিত জায়গায় রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy