প্রতীকী ছবি
একের থেকে অনেক। কালিম্পংয়ের করোনা আক্রান্ত মহিলার থেকে ঠিক কত সংক্রমণ ছড়িয়েছে বা ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তার খোঁজে বেরিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দিকে শিলিগুড়ি, কালিম্পংয়ে পরিবার, পরিবারঘনিষ্ঠ, ডাক্তার, প্যাথলজি কেন্দ্রের লোকজন রয়েছে সেই তালিকায়। অন্য দিকে বিমানে মহিলার সহযাত্রী সিকিম, জয়গাঁর বাসিন্দাও নজর থেকে বাদ যাননি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার এক পড়শির সূত্রে এই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ডুয়ার্সের এক শহরেও। রবিবার মধ্যরাত পার করে আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু হয়। তার পর থেকে স্বাস্থ্য দফতর খোঁজ শুরু করেছে তাঁদের। একই সঙ্গে সংস্পর্শে আসা ওই লোকজনের কাছাকাছি যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের খোঁজও বাদ যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই মহিলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন এমন অন্তত ৪০ জনকে চিহ্নিত করে হাসপাতালে এবং বাড়িতে কোয়রান্টিন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত কয়েক দিনে মহিলার সঙ্গে কার কার দেখা হয়েছিল, যাঁদের দেখা হয়েছিল তাঁরা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, সব বের করতে হবে। এমন কেউ হয়তো সংক্রমিত হতে পারেন, যিনি ওই মহিলাকে বা তাঁর কোনও আত্মীয়স্বজনকে চেনেনই না। কিন্তু তিনি এমন কোনও ব্যক্তির থেকে সংক্রমিত হয়েছেন যে ওই মহিলার কাছাকাছি ছিলেন। যে প্যাথলোজি কেন্দ্রে মহিলা পরীক্ষা করাতে গিয়েছেন, সেখানকার দরজার হাতল থেকেও কেউ সংক্রমিত হয়ে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন, এই আশঙ্কাও যথেষ্ট। সে কারণে স্বাস্থ্য দফতর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কালিম্পং থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ওই মহিলা প্রথমে চেন্নাই গিয়েছিলেন। চেন্নাই থেকে ফের শিলিগুড়ির আত্মীয়ের বাড়ি হয়ে কালিম্পঙে ফিরেছিলেন। তিনি শিলিগুড়ির একটি প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে নানা পরীক্ষা করিয়েছিলেন, শিলিগুড়ি ও কালিম্পঙে চিকিৎসা করিয়েছেন। শিলিগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়ি, গাড়িচালক, চিকিৎসক, প্যাথোলজি কেন্দ্রের কর্মীরা চিহ্নিত হয়েছে। অনেককেই কোয়রান্টিনে বলে দাবি।
শিলিগুড়ির বাড়ির পরিচারিকা অন্য কোনও বাড়িতে কাজ করতেন কিনা, তা দেখা হচ্ছে। চেন্নাই থেকে মহিলা যে বিমানে ফিরেছিলেন, তাতে চেপে বাগডোগরায় নামেন আরও ৬-৭ জন। অধিকাংশই সিকিমের বাসিন্দা বলে দাবি। এ দিন পাওয়া খবরে তাঁদের মধ্যে দু’জনকে সিকিমে কোয়রান্টিন করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের এক শ্রমিককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যিনি কালিম্পঙে ওই মহিলার বাড়িতে কাজ করেছেন এবং দু’দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন।
মহিলা কালিম্পঙে ফিরে আসার পরে এক পড়শি দেখা করতে গিয়েছিলেন। পরে সেই পড়শি সেবক হয়ে ডুয়ার্সের একটি শহরে পৌঁছন বলে প্রশাসন খবর পেয়েছে। ডুয়ার্সে কাদের সঙ্গে সেই পড়শি দেখা করেছিলেন, তাঁদেরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ওই মহিলা শিলিগুড়ির যে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন, সেই পরিবারের ১৪ জনকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কোয়রান্টিন করা হয়েছে। তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে। যে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়ারান্টিনে থাকা সকলের সঙ্গে দেখা করবেন, তাঁদের যথাযথ সাবধানতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে থাকা ওই ব্যক্তিরা এ দিন ক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখলেও শিশুদের জন্য দুধ জল কিছুই মিলছে না বলে অভিযোগ।
জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক দাবি করেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আনা হয়েছে মহিলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সংস্পর্শে আসা আরও ১৩ জনকে। সেখান থেকে তাঁদের সরাসরি রানিনগর কোয়রান্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy