প্রতীকী ছবি
‘‘সবাই নিজের নিজের বাড়িতে চলে গেল। শুধু আমরা বাঙালিরাই আটকে পড়লাম। আমাদের কি ফিরিয়ে নেবে না?’’ সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে ফোনে কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন সঞ্জয় বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করছেন মরাঠাভূমিতে। লকডাউনের জেরে তাঁর মতো এ রাজ্যের আরও ২৪ জন শ্রমিক আটকে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বাইয়ে। ফেরার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন স্থানীয় থানা থেকে পঞ্চায়েত, সকলের দরজায়। সঞ্জয়দের কথায়, কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনও আশার কথা শুনতে পাননি।
এই দলে শুধু উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের লোকই নয়, রয়েছেন মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলার বাসিন্দাও। অনেকে পরিবার নিয়ে রয়েছেন। প্রত্যেকেই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। সঞ্জয়দের কাছ থেকে জানা গেল, তাঁদের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের শ্রমিকরাও কাজ করতেন। কিছু দিন আগে সেই সব রাজ্যের লোকেরা রাজ্যেরই উদ্যোগে ঘরে ফিরে গিয়েছেন বলে দাবি সঞ্জয়দের। কিন্তু তাঁদের কাছে কোনও বার্তা আসেনি, দাবি বাংলার শ্রমিকদের। সোমনাথ দাস নামের এক শ্রমিক ফোনে বললেন, ‘‘দিদিকে বলোতে ফোন করেছি। পশ্চিমবঙ্গের দেওয়া টোল ফ্রি নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, কন্ট্রোল রুমের নম্বর, সর্বত্রই ফোন করেছি। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। কীভাবে যে এখানে আমরা আছি, সেটা ঈশ্বরই জানেন।’’
শ্রমিকদের দাবি, লকডাউনের পর কিছু দিন ঠিকাদার তাদের খাবার দিয়েছিল। তার পর সেটা দেওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। হাতের টাকাও শেষ। এখন শুধু আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়ি ফিরতে তাঁরা এতটাই মরিয়া যে, স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে মাথা পিছু ৬০০ টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষাও করিয়েছেন। সেই সব কাগজ নিয়ে এখন থানা, পঞ্চায়েত দফতরে ঘুরছেন, যদি তাঁদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, সেই আশায়। ‘‘থানা থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তোমাদের রাজ্য সরকার নিয়ে গেলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগই করছেন না,’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বাসিন্দা স্বপন সরকার বলেন।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাজ্যের অনেকে আটকে আছেন। সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আমরা নবান্নে পাঠাচ্ছি। সেখান থেকেই ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং হবেও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy