বোধন: কোচবিহারে জনজোয়ার ষষ্ঠীতেই। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এ যেন বন্দি জীবনে মায়ের আগমন৷
তথাকথিত পুজো নেই৷ কিন্তু তাতে কী? পঞ্চমীর সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষের থেকে এক টুকরো সাদা কাপড় চেয়ে নিয়েছিলেন এক বিচারাধীন বন্দি৷ তাতেই তুলির টানে দেবী দুর্গার ছবি এঁকেছেন তিনি৷ আর সেই ছবিকে ঘিরেই শারদোৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা বাকি বন্দিরা৷ যে আনন্দের শরিক জেল কর্তৃপক্ষও৷ আলিপুরদুয়ার জেলা সংশোধনাগারে এ ভাবেই চলছে দেবী বরণ৷
আলিপুরদুয়ার জেলা সংশোধনাগারে মূলত বিচারাধীন বন্দিদেরই রাখা হয়৷ বর্তমানে ২২৪ জন বিচারাধীন বন্দি রয়েছেন এই সংশোধনাগারে৷ বছরভর নানা অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হয় এই সংশোধনাগারে৷ হয় নানা উৎসবও৷ কিন্তু দুর্গা পুজোর আয়োজন সে অর্থে কখনও হয়নি এই সংশোধনাগারে৷
এই অবস্থায় আচমকাই রবিবার, পঞ্চমীর সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষের কাছে এক টুকরো কাপড় ও রং-তুলি চান সংশোধনাগারের আবাসিক সেবক কামি৷ একটি মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দি হিসাবে রয়েছেন তিনি৷ সংশোধনাগারের এক কর্তার কথায়, “শুরু থেকেই ছবি আঁকার একটা ঝোঁক লক্ষ্য করেছিলাম সেবকের মধ্যে৷ সে জন্য ওর আর্জি মেনে মাঝে মধ্যেই কাগজ ও রং-তুলির ব্যবস্থা আমরা তাকে করে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সে আচমকা কেন এক টুকরো কাপড় ও রং-তুলি চাইল, তা বুঝতে পারিনি৷ জিজ্ঞাসা করতেই বলল, পুজো উপলক্ষে মায়ের ছবি আঁকবে৷ আর দেরি করিনি৷ সঙ্গে সঙ্গেই ওকে কাপড় ও রঙ-তুলির ব্যবস্থা করে দেই৷’’
আর এতে করেই যেন মুহুর্তের মধ্যে উৎসব পরিবেশ শুরু হয়ে যায় সংশোধনাগারের ভিতরে৷ কাপড় ও রং-তুলি হাতে পেয়ে তাতে দুর্গার ছবি আঁকা শুরু করে দেন সেবক৷ তাকে ঘিরে বসে থাকেন সুধা, আনন্দ, ভগবান ও অজয়রা৷
পুজোর চার দিন বাকিরা পুজোর চার দিনের পরিকল্পনা করে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানান শুরু করে দেন৷ পুজোকে ঘিরে আবাসিকদের এই আনন্দের শরিক হয়ে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চারদিন খাওয়া-দাওয়ার মেনুতেও ব্যাপক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ৷ সোমবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় সেবকের আঁকা ছবি লাগিয়ে দেওয়া হয় সংশোধনাগারের ভিতরে ফাঁকা একটি জায়গায়৷ আর তাকে ঘিরেই সংশোধনাগারের ভিতরেও শুরু হয়ে ‘শারদোৎসব’৷
সংশোধনাগারের কর্তারা জানিয়েছেন, পুজোয় অষ্টমীর দিন সংশোধনাগারের প্রত্যেক আবাসিকের জন্য খিচুড়ি রান্না হবে৷ এ ছাড়া বাকি দিনগুলিতে মাছ ও ডিম থাকবে৷ সংশোধনাগারের সুপার অনিরুদ্ধ গুপ্ত বলেন, ‘‘জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব ধরনের অনুষ্ঠানই এখানে পালন করা হয়৷ তারই অঙ্গ হিসাবে পুজোর ক’দিনেও কিছু আয়োজন হচ্ছে সংশোধনাগারে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy